বাতাসে বাষ্প : ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস

চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে তাপমাত্রা তরতর করে বাড়ছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: ক’দিন ধরেই ভ্যাপসা গরম। যতোটা গরম অনুভুত হচ্ছে তাপমাপার যন্ত্রের পারদ এতোটা উঠছে না। কেনো? ক’দিন আগে বৃষ্টির পর তীব্র খরায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির করণেই ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এরকমই মন্তব্য করে বলেছেন, তবে মে মাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অগ্নি স্নানে ধরাকে শুচি করতে আবহনী গীতে বরণ করা বোশেখের অগ্নি এলেই অগ্নি মূর্তি ধারণ করেছে। দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। ক্রমশ বাড়ছে তাপ। দিনের বেলার পর সূর্য ডুবলেও তাপমাত্রা  তেমন একটা কমছে না। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।  বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় সারা দেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নিয়মিত বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না। এ বছর আবহাওয়া কিছুটা বৈরি। এ সময় মৃদু ও মাঝারি দাবদাহ সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এ বছর তা সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। এ ধরনের দাবদাহে এতোটা গরম অনুভূত হয় না কখনো। কিন্তু এ বছর হচ্ছে।

দুর্বল মরসুমি বায়ুপ্রবাহ এবং বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় সারাদেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমবে। অথচ আগামী মাসের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সেই সাথে আগামী জুনে মরসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এপ্রিল মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিলো, চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।  দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চার দিন বজ্রসহ মাঝারি অথবা তীব্র কালবোশাখি বা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র চার-পাঁচ দিন হালকা বা মাঝারি কালবোশেখি বা বজ্রঝড় হতে পারে।

এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং অন্যত্র দু থেকে তিনটি মৃদু ৩৬  থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাঝারি ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি  সেলসিয়াস তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে এক  থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন বজ্রসহ মাঝারি অথবা তীব্র কালবোশেখি বা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র তিন থেকে চার দিন হালকা বা মাঝারি কালবোশেখি হতে পারে।

দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২ থেকে ৩টি তীব্র তাপপ্রবাহ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাঝারি ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জুন মাসের প্রথমার্ধে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মরসুমি বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করতে পারে বলে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ১৯০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি। সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক দু ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ১১৪ বছরের রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। এ বছরের ২১ দিনে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিলো ১১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চ মাসের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেটিও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক এক ডিগ্রি। ঢাকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৯৬০ সালে ৪২ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।