বাজেট পাস

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয়সংসদে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা স্পিকারশিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। গত৫ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকারবাজেট পেশ করেন। গতকাল নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৪ সংসদে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এইবাজেট পাস করা হয়।বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্টমন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবিসংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবি প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটেঅনুমোদিত হয়।

প্রধান বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যগণ মঞ্জুরি দাবিরযৌক্তিকতা নিয়ে মোট ২৪৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে চারটিদাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরাআলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।এরপর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৪ পাসের মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।গত৮ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওঅন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের ২৬৫ জন সদস্য ১৬ কার্যদিবসে মোট৬৩ ঘণ্টা ০৬ মিনিট মূল বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণকরেন।

বাজেটে বিদেশি অনুদাসহ মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৯হাজার ১৬০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ববোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা জিডিপির১১ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব আয় ধরাহয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাতথেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১শতাংশ।বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেবরাদ্দসহ ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে নতুন অর্থবছরেপ্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বাজেটেসার্বিক বাজেট ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটিটাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ।অভ্যন্তরীণউৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ওব্যাংক বহির্ভুতখাত থেকে ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখাহয়েছে।

এর আগে গতকাল শনিবার সংসদে অর্থবিল ২০১৪ পাস করা হয়েছে। বিলেআবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করার বিধান অব্যাহত রাখা হয়েছে।ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয় দু লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়। নারী ও ৬৫ বছরউর্ধ্ব প্রবীণদের ক্ষেত্রে তা দু লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধীদেরক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহতমুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু করহরাস করা হয় এবং কর অবকাশ বহাল রাখা হয়েছে।

বাজেটে সামাজিকঅবকাঠামো খাতে ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশের মধ্যে মানবসম্পদ খাত-শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহসংশ্লিষ্টখাতে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ৩০ দশমিক ১৫, সার্বিককৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ দশমিক ৬৯, যোগাযোগ খাতে ৯দশমিক ২৪, বিদ্যুতও জ্বালানী খাতে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ সেবাখাতে ২৩ দশমিক ৫৮শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ৩ দশমিক ৪, ঋণ পরিশোধ বাবদ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ঋণদান ও অন্যান্য খাতে অবশিষ্ট ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বরাদ্দদেয়া হয়েছে।বাজেটে, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।