বাঙালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসব আজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: কালের যাত্রা নিরন্তর, নিরবধি। মহাকালের রথ সেই পথযাত্রায় পেরিয়ে গেলো ১৪২৩ বাংলা বর্ষের সীমারেখা। আজ পয়লা বোশেখ, বঙ্গাব্দ ১৪২৪। নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাঙালির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিতে। নতুন আলোর কিরণধারায় শুরু হলো সুন্দর আগামীর পথচলা। আজ বোশেখ উৎসব।পূর্বাকাশে লাল টকটকে সূর্যের কিরণচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ার আগেই নতুন স্বপ্নের উচ্ছ্বাস নিয়ে ঘুম ভেঙেছে প্রতিটি বাঙালির। জরা-জীর্ণকে পেছনে ফেলে নতুনকে বরণ করে নিতে গাইবে বৈশাখী গান। জোরালো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের এ আনন্দ উৎসব থেকেই অনুপ্রেরণা নেবে বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করার। কুসংস্কার আর কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আজ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক উৎসব।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এক অভিন্ন হৃদয়াবেগ নিয়ে মিলিত হবে একই উপলক্ষে। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে জাতিসত্তার পরিচয়কে নতুন তাৎপর্যে উপলব্ধি করে গৌরব বোধ করে। এ গৌরব ও চেতনাই বাঙালিকে প্রেরণা জুগিয়েছে আপন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। আজ গোটা দেশজুড়ে সুরে সুরে ধ্বনিত হবে জাতির মঙ্গলবার্তা। আর এই মঙ্গলালোকে স্নাত হতে বাঁধভাঙা জোয়ারে মানুষ আছড়ে পড়বে শহর-বন্দরসহ প্রতিটি জনপদে। গোটা দেশজুড়ে সৃষ্টি হবে এক অভাবনীয় দৃশ্যের। সকালে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের সুর ধ্বনিতে মানুষের যে অংশগ্রহণ দিনমান এমনই ব্যস্ততা থাকবে সবখানে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক এ উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হবে গোটা দেশ। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত সমৃদ্ধ এ সংস্কৃতির চেতনা বিকশিত বাঙালির দেহ-মনে। বসনে-ভূষণে বোশেখকে ধারণ করে বাঙালি আজ মেতে উঠবে প্রাণের জোয়ারে। বাঙালির ঘরে ঘরে নানা আচার-আয়োজনে থাকবে নববর্ষের নানা আয়োজন। সে সাথে পান্তা ইলিশ, মুড়ি-মুড়কি, খই আর মণ্ডা-মিঠাই বাতাসার স্বাদ গ্রহণের হিড়িক। আড্ডা, আমন্ত্রণ, উচ্ছ্বাসে কেটে যাবে গোটা দিন।

নব্বর্ষ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টায় ঝিনুক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতো মুকুল ফৌজের বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সাড়ে ৭টায় চাঁদমারী মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রাটি হাসান চত্বর ও কবরী রোড হয়ে সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের বাসা প্রাঙ্গণে পান্তা ভোজে অংশ নেবেন আমন্ত্রিত অথিতিরা। অনেকের বাসাবাড়িতে তৈরি হবে বাঙালি খাবার-ইলিশ মাছভাজা, শুটকি-বেগুন-ডাল-আলু-কালিজিরাসহ নানা পদের ভর্তা। আবার অনেকের ঘরে সর্ষে ইলিশও থাকবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশের সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। বিকেলে চাঁদমারী মাঠে পৌর বোশেখি মেলার উদ্বোধন করা হবে। নববর্ষ উপলক্ষে পত্রপত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা। বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সমপ্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। কায়মনে বাঙালি হয়ে উঠার বাসনা ছাড়া সব কিছুই তুচ্ছ মনে হবে সবার। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই নয়, পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে, সেখানেই বর্ণাঢ্য উৎসবের পালিত হবে পহেলা বোশেখ। এদিকে কোনো ধরনের হুমকি না থাকলেও আত্মঘাতী জঙ্গিরা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে ঘিরে রমনা পার্কসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরোটাই ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা চাদরে। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয় এ উপলক্ষে সারাদেশই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।