বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে আজ

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়া বাড়িতে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বাউল উৎসব ও গ্রামীণ মেলা। এ আয়োজনকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ায় মরা কালিগঙ্গা নদীর তীরের আখড়া বাড়িতে এখন সাজসাজ রব। ইতোমধ্যে আয়োজকরা এ উৎসবের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছেন। মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইজি জীবদ্দশায় শিষ্যদের নিয়ে দোল পূর্ণিমায় ছেঁউড়িয়ার কালীগঙ্গা নদীর তীরে সারারাত ধরে তত্ত্বকথা আলোচনা ও গান-বাজনা করতেন।

আজ আর কালী গঙ্গায় স্রোত নেই, মানুষ তাই নাম দিয়েছে মরাকালী গঙ্গা। তবে নদীর স্রোত থেমে গেলেও সাঁইজির ভক্তরা থেমে যাননি। তার মৃত্যুর পরও ভক্ত-শিষ্যরা এ বিশেষ দিনটি পালন করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। তবে এবার স্বাধীনতা দিবসের কারণে পাঁচ দিনের উৎসবকে কাটছাট করে ৩ দিনের করা হয়েছে।

এ উৎসবে যোগ দিতে এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বাউল তীর্থভূমি ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়িতে ছুটে এসেছেন সাধু-গুরু, বাউল, ভক্তরা। ছোট দলে ভাগ হয়ে দরদ ভরা গলায় গেয়ে চলেছেন লালনের গান। আবার কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদি বাউল ধর্মের নিগুড় তত্ত্বকথার আলোচনায়। এসেছেন দেশ-বিদেশের নানা বয়সী দর্শনার্থী। এ আয়োজনে যোগ দেয়ার জন্য বাউলদের কোনো চিঠি দেয়া হয় না, জানানো হয় না নিমন্ত্রণ। তারপরও এক অদৃশ্য সুতোর টানে এরা দলে দলে ছুটে আসেন এ বাউল ধামে। আখড়া বাড়ির আঙিনায় বসার জায়গা হবে না বলে অনুষ্ঠান শুরুর ১০ দিন আগেই এসে আসন পেতেছেন সিরাজগঞ্জের লালন ভক্ত ষাটোর্ধ্ব কলিম শাহ।

আলাপকালে এই প্রবীণ বাউল সাধক বলেন, বছরে দুবার সাঁইজির বারামখানায় সাধু-গুরুদের মিলনমেলা বসে। এই দিন এলে কিছুতেই বাড়িতে মন টেকে না। সংসারের সব মায়ার সুতো ছিঁড়ে চলে আসেন আখড়াবাড়ি, গত ৩০ বছর ধরে এমনটাই করে আসছেন কলিম শাহ। আরেক বাউল সাধক ফকির জিল্লু শাহ বলেন, আগে এলে সাঁইজির মাজারের কাছাকাছি বসার জায়গা মেলে। আবার অনেক দিন ধরে এখানে কাটানো যায়। এর যে কী আনন্দ, কী স্বাদ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

এদিকে পাঁচ দিনের এ স্মরণোৎসবের সকল প্রস্ততি ইতোমধ্যেই শেষ করেছে লালন একাডেমি। এছাড়া এ উসবকে নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। একাডেমির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হক বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। এ কারণে এবার উৎসবের কলেবর ছোট করে তিন দিনের করা হয়েছে।