বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল

অবৈধ ঘোষণার সূত্র ধরেই জাতীয় সংসদকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন

 

অইনমন্ত্রী বললেন- সরকার যখনই মনে করবে তখনই নিষিদ্ধ করা

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল- জাতীয় সংসদকে এমন তথ্যই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি খোলাসা করলো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন অথরিটি ইসি। সংসদ সচিবালয়কে ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. আতিয়ার রহমানের এক তথ্য বিবরণী থেকে বিষয়টি জানা গেছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদে অইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকার যখনই মনে করবে, তখনই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, জামায়াত এবং এর অঙ্গ-সংগঠন নিষিদ্ধ করতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা আছে। সরকার যখনই মনে করবে, বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে সংসদে পাসের জন্য আনা হবে। সোমবার জাতীয় সংসদে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। তরীকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- ‘জামায়াত-শিবিরের নিবন্ধন বাতিল করতে তাদের দায়েরকৃত মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কি-না?’ জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছে। দ্রুত কিছু করতে চাইলে তরীকত ফেডারেশনকে আপিল বিভাগে দরখাস্ত করতে হবে।

২০১৩ সালে ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে গত রোববার পর্যন্তও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ইসি। কমিশন থেকে কেবল বারবার বলা হয়েছে, দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এদিকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে জামায়াত প্রশ্নে ইসির দেওয়া ব্যাখ্যাতেও বলা হয়েছে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর ওপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে)। শেষ পর্যন্ত দলটির বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করলো ইসি।
কমিশনসূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ থেকে এক প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল কিনা তা জানাতে বলা হয়। তারই অংশ হিসেবে সোমবার ব্যাখ্যাটি সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য কোনো গেজেট প্রকাশের দরকার নেই। অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশেই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তবে হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দলটি। এতে ‍তারা জয়ী হলে আবার নিবন্ধন দেওয়া হবে। বর্তমান ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টি।