বাংলাদেশে আল-কায়েদার জিহাদের আহ্বান

সংগঠনটির বর্তমান প্রধান জাওয়াহিরির অডিও বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা বাংলাদেশে জিহাদের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির বর্তমান প্রধান ডা. আয়মান আল-জাওয়াহিরি এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশের জনগণকে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদের এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে অভিযোগ করে জাওয়াহিরি বলেন, বর্তমানে দেশটিতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। চার দশক আগে স্বাধীনতা, ঐহিত্য, সম্মান এবং জনগণের মুক্তির জন্য বাংলাদেশের জন্ম হলেও দেশটি আজ এক বিরাট কারাগারে পরিণত হয়েছে। আর পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি দুর্বল করা। বাংলাদেশ নিয়ে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল- জাওয়াহিরির দেয়া অডিও বার্তার সাথে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে হেফাজতের ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আল-কায়েদা বা জাওয়াহিরির নাম বলে যে অডিও বার্তা প্রচার করা হচ্ছে তা ষড়যন্ত্র বলে আমাদের মনে হচ্ছে। এর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে হেফাজতে আমির শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নামে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাওয়াহিরি বা আল-কায়েদাকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সৃষ্টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘কে বা কারা কোন উদ্দেশে এ অডিও বার্তা প্রচার করেছে তা আমাদের জানা নেই। আমাদের সন্দেহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বসহ দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র হতে পারে।’

বাংলাদেশ ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স শিরোনামের অডিও বার্তাটি জিহাদোলজি ডট নেট নামক ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। ২৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের বার্তাটি আল-কায়েদার মিডিয়া প্রোডাকশন হাউস এজ-শাবাব গত ১৪ জানুয়ারি জিহাদি ওয়েবসাইটে পোস্ট করে। এ ওয়েবসাইটির মাধ্যমে সারা বিশ্বে জিহাদি আন্দোলনের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে। জাওয়াহিরির নামে প্রচারিত অডিও ক্লিপটির প্রথম সোয়া দুই মিনিট গত বছর মে মাসে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ এবং তাদের তুলে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কিছু আলোকচিত্র দেখানো হয়েছে। এরপর জাওয়াহিরি পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি আরবিতে বক্তব্য রাখেন। একইসাথে ক্লিপটিতে বক্তব্যের ইংরেজি সাবটাইটেল দেখা যায়।

বার্তায় মিসরীয় চিকিত্সক জাওয়াহিরি বলেন, মুসলমানদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। অথচ মুসলিম বিশ্ব এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অচেতন। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে সত্য গোপন করছে। বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলছে। কিন্তু মুসলমানরা সেদিকে কোনো নজরই দিচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার, যাতে ভারতীয় এজেন্ট, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদরাও জড়িত। যারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সব কিছু করতে পারে। যাহোক, উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিম উম্মাহ এই ষড়যন্ত্রের মূল শিকার।

তিনি বলেন, অপরাধীরা যে বাজে বীজ বপন করেছিলো তারই ফল হিসেবে এখন ইসলামের মৌল বিশ্বাস, রসুল (স:) ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঠেকানো বা পাকিস্তানি সামরিক শাসন থেকে মুক্তিও এর প্রকৃত লক্ষ্য ছিলো না। প্রকৃত লক্ষ্য ছিলো, এ উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি দুর্বল করা, মুসলমানদের বিশ্বাসকে ছিন্নভিন্ন করা।

বার্তায় বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানে আজ যা ঘটছে তা হলো সেই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নেরই প্রাথমিক পর্যায়। আর পূর্বে উল্লেখকৃত অপরাধীরা শত্রুদের অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। গতকাল যারা বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালালো, আজ তারাই পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। একইভাবে বাঙালির সম্মান রক্ষার ধুয়া তুলে যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে জোট বেঁধেছিলো, তারাই আজ বাঙালির বিশ্বাস, সম্মান, জীবন ও সম্পদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

জাওয়াহিরি বলেন, অপরাধীরা দাবি করে, ইসলাম ও এ উপমহাদেশের মুসলমানদের রক্ষায় ৬০ বছরেরও অধিককাল আগে তারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলো। অথচ আজ আমরা যে পাকিস্তান দেখছি, যেখানে শরিয়াহ’র কোনো স্থান নেই। স্বাধীনতা, সম্মান নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সরকার, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ এমনভাবে কাজ করছে যেন ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীরা স্বার্থ রক্ষায় তাদের ভাড়া করেছে।

একইভাবে তারা দাবি করে, ৪০ বছর আগে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা, ঐতিহ্য, সম্মান এবং জনগণের মুক্তির জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ এক বিরাট কারাগারে পরিণত হয়েছে। যেখানে মুসলমানদের ধর্মপরায়ণতা, সম্মান, মর্যাদা ও পবিত্র স্থান অপবিত্র করা হচ্ছে। তাদের জীবন আজ বিপন্ন। ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের রক্ষায় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। স্বাধীনতার জন্য যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলো তারা এখন ভারতের বশ্যতা স্বীকারকারী প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। জাওয়াহিরি বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে বাংলাদেশে এসব ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে। তাই সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো নিজেদের দুর্ভাগ্য, অপমান ও বিদেশি শক্তির প্রতি দাসত্বের মনোভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের সচেতন হতে হবে।

২০১১ সালে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির প্রধান হওয়া জাওয়াহিরি বলেন, কোনো ধরনের অপরাধ ছাড়া বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য তাদের হত্যা করা হয়। বিনা অপরাধেই শ শ ধর্মভীরু লোককে কঠিন পরিস্থিতি, জেল, বিচার, মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর কারণ হলো, তারা ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলো। তিনি বলেন, পশ্চিমাদের সাথে উপমহাদেশের নেতৃত্ব দেয়া অপরাধীরা মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাচ্ছে। যাতে তারা স্বৈরতন্ত্র ও অবিশ্বাসের ধারায় মুসলমানদের দাসে পরিণত করতে পারে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে পাশবিক কৌশল ব্যবহার করে তারা মানবজাতিকে দাসে পরিণত করতে চায়। সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন অংশে বিভক্ত করতে চায়। এ থেকে মুক্ত হতে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ছাড়াও জাওয়াহিরির বক্তব্যে ২০০১ সালের ৫ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতা মাওলানা আব্দুল রাশিদ গাজী এবং ১৯৮৯ সালের ২৪ নভেম্বর গাড়িবোমা হামলায় নিহত ফিলিস্তিনের সুন্নি ইসলামিক বিদ্বান ইমাম আব্দুল্লাহ আজমের হত্যার কথাও উঠে এসেছে।