বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন কোন পথে? প্রশ্ন আছে জবাব নেই : গৃহবন্দী খালেদা জিয়া? জানুয়ারির শেষ সপ্তায় নতুন সরকার : সমঝোতার নতুন পথ খুঁজছে আন্তর্জাতিক মহল

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন কোন পথে? প্রশ্ন আছে জবাব নেই। জবাব খুঁজতেই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহল। এদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট আগামী ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। অপরদিকে বিরোধীদলীয় ১৮ দলীয় জোট নেতৃ খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে। তাদের আহ্বানে সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে যে রাজনৈতিক সংঘাতের অবসান ঘটবে- এমন নিশ্চয়তা নেই কূটনীতিকদের কাছে। বরং নির্বাচনের পরেও দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের আশঙ্কা করছেন তারা। তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত ও পরে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে যেভাবেই হোক দ্রুত সমঝোতা চায় আন্তর্জাতিক মহল। কূটনীতিকরা মনে করছেন, সমঝোতা ছাড়া এ সঙ্কট থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এমনটি বিবেচনায় নিয়ে কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েয়েছ। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এবং দিল্লির কূটনীতিকরা কয়েক দিনে বেশ সরব হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার সাথে যেহেতু নিজেদের স্বার্থ জড়িত, তাই সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে একমত তারা। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহল একযোগে কাজ করা এবং প্রয়োজনে চাপ সৃষ্টি করার ব্যাপারেও একমত হচ্ছে।

এদিকে আগামী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি আগামী ২৪ জানুয়ারি আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট, ২৫ জানুয়ারি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এবং ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। ফেব্রুয়ারির ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিনক্ষণ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোচেয়ারম্যান এইচটি ইমাম দিনভর নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দেন। তিনি নির্বাচন কমিশনারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আরও এক দফা বৈঠক করেন এইচটি ইমাম। তারপর দলের আরেক উপদেষ্টার হেয়ার রোডের বাসায় আরও এক দফা বৈঠক হয়। ওইসব বৈঠকে সবগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকগুলোয় উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকগুলোয় সরকার গঠনের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক থেকে বেশ কিছু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইনগত এবং এ সংক্রান্ত নতুন কোনো সমস্যার উদ্ভব না হলে এসব তারিখেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং সরকার গঠন হবে। রাতের বৈঠকে যোগ দেয়া একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে যুগান্তরকে বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি নতুন সরকার পাবে দেশ। ফেব্রুয়ারিতেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে।

অপরদিকে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন বুধবার বিকেলে গুলশানের নিজ বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তা না হলে তার সাথে আমাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না কেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো, গণতন্ত্রের প্রতি যদি তাদের ন্যুনতম শ্রদ্ধাবোধ থেকে থাকে তাহলে অবিলম্বে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করা হোক। এর আগে লিখিত বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন চূড়ান্ত ধাপে উপনিত হয়েছে। বিজয় অর্জন না হওযা পর্যন্ত জনগণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। খালেদা জিয়ার বাসা, তার রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলটির সব কার্যালয় অবরোধমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, নইলে আওয়ামী লীগের প্রায় ডুবন্ত নৌকা মাঝিমাল্লাসহ নিমজ্জিত হবেই। ৬ষ্ঠ দফা অবরোধের প্রথম দিনে চিত্র তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেলিমা রহমান জানান, মেহেরপুর জেলার ১৮ দলীয় জোট নেতা আবদুল জব্বার যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, সিজারজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, ফেনি, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ জেলায় ১৮ দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে।