বাংলাদেশি স্কুলছাত্রকে গুলি করে মারলো বিএসএফ : বিজিবির তীব্র প্রতিবাদ

SAMSUNG CAMERA PICTURES

 

জীবননগর নতুনপাড়া সীমান্ত সংলগ্ন আমবাগানে আমপাড়ার কাজে গিয়ে বিপত্তি

 

এম আর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুনপাড়া সীমান্তে পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে বাংলাদেশি স্কুলছাত্র সিহাবকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। পতাকা বৈঠকে বিএসএফের নিকট এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সীমান্ত এলাকাবাসীও।

এদিকে নিহত শিহাব উদ্দিন সজলের (১৬) মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করেছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিএসএফ নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আমির মজিদ।

বিজিবি, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের নতুনপাড়া সীমান্ত জুড়ে রয়েছে ভারতীয় কৃষকদের আমবাগান। তারাকাঁটার বেড়া দেয়ার পর এসব বাগান এ পাশে রয়ে গেছে। তারকাটার বেড়া দেয়ার ফলে ভারতীয় আমবাগান মালিকরা এ আম ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যেতে নানা সমস্যায় পড়েন। ফলে দেশ বিভাগের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এসব বাগানে মুকুল আসার পর পরই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয় তারা। এর ফলে সীমান্তের এ সকল আমবাগানে বাংলাদেশিদের অবাধ যাতায়াত। যা উভয় সীমান্তবাসীরদের নিকট পরিচিত চিত্র। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে অবগত থাকেন। এ নিয়ে পূর্বে বিএসএফ কোন প্রকার আটক বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়নি। নতুনপাড়া সীমান্তে ভারতের বানপুরের শৈলেন প্রামাণিকের ১০ বিঘার আমবাগানে মুকুল আসলে গোয়ালপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমান ওরফে ফোজোর ছেলে ইনামুল হক ও মুনসুর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম এবার যৌথভাবে এ বাগান কিনে নেন। এ আমবাগান কেনার পর গত প্রায় দু মাস ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে তারা আমবাগানের পরিচর্যা করেন। আমে পাক ধরায় গতকাল সকালে ওই বাগানের আম পাড়ার জন্য একই গ্রামের মাহাবুল হালসানার ছেলে শিহাব উদ্দিন সজল, শহিদুল ইসলামের ছেলে সবুজ (১৮), মোমিনুল ইসলামের ছেলে বিপ্লব (১৯) ও জামাত আলীর ছেলে আলমকে (১৯) মজুর হিসেবে নেয়া হয়। তারা গিয়ে আম পাড়াকালে ভারতের ১১৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের বানপুর ধনিঞ্চার ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা শিহাবসহ তার ৩ সাথীকে আটক করে। এ সময় বাগানের ভেতরেই তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় বিএসএফ। নির্যাতনের একপর্যায়ে মজুর খাটতে যাওয়া ৮ম শ্রেণির ছাত্র শিহাব পালানো চেষ্টা করে। বিএসএফ এ সময় তাকে ধাওয়া করে ধরে এবং তার সাথীদের সামনেই পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। রক্তাক্ত শিহাবকে এ সময় নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তার সাথীদের নির্দেশ দেয় বিএসএফ। সঙ্গীরা আহত শিহাবকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসে। পরে তাকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাহিনা আফরিন লিয়া তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠক আহ্বান করে বিজিবি। বেলা ২টায় নতুনপাড়া সীমান্তের ৬৬নং পিলারের নিকট ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য বিএসএফের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মোহাম্মদ আমির মজিদ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চরম ক্ষুদ্ধ হয়েছে সীমান্তে বসবাসকারীরা। তারা এটিকে বিএসএফের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড অবিহিত করে বিচার দাবি করেছেন।

অপরদিকে মাহাবুল হালসানা ও দেলোয়ারা খতুন দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলে শিহাবকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। শিহাবের মৃত্যুতে গোয়ালপাড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ময়না তদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে বেদনা বিধুর পরিবেশে গোয়ালপাড়া কবরস্থানে নিহত শিহাববের মৃতদেহ দাফন করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।