বহু বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির নির্বাচন : দু’পক্ষের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ঘোষিত নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ভোট। এ নির্বাচনে দুটি পক্ষ অনেকটা প্যানেলভুক্ত হয়েই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। এর একটির নেতৃত্বে বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালক এবং অপরটির নেতৃত্বে সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু। দু’পক্ষই গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজ নিজ পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে। সকালের সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান লাভলু বক্তব্য দিতে গিয়ে এবারের নির্বাচনে নির্বাচনী বোর্ডের বৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। বিকেলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে অপরপক্ষের অভিযোগ খ-ন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ আইনী জটিলতা শেষে গত ১২ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০১৮-২০২০ নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ড তফশিল ঘোষণা করে। বর্তমান সভাপতি মো. ইয়াকুব হোসেন মালিক, মো. শাহারিন হক মালিক, মো. মন্জুরুল আলম মালিক লার্জ, সালাউদ্দিন মো. মর্তুজা, এসএম তসলিম আরিফ বাবু, নীল রতন সাহা, একেএম সালাউদ্দিন মিঠু, মো. আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার সোনা, মো. তাজুল ইসলাম তাজু, হারুন অর রশিদ, কিশোর কুমার কু-ু, মো. মাহফুজুর রহমান জোয়ার্দ্দার মিজাইল, মো. সামসুজ্জামান ও পবিত্র কুমার আগরওয়ালা প্যানেলভুক্ত হয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।
আপরদিকে আলাউদ্দিন হেলা, মো. মানিকুজ্জামান, মো. মকলেছুর রহমান, মো. ফজলে রাব্বী মুন্সি, মো. মাহবুব আলম, মো. সালাউদ্দিন মল্লিক, হাজি মো. আবুল কালাম, আব্দুল মান্নান, মো. মফিজুর রহমান মনা, মো. জাহিদুল হাসান জোয়ার্দ্দার, মো. দেলোয়ার উদ্দিন জোয়ার্দ্দার, মো. সামসুদ্দোহা মল্লিক হাসু ও তানজির আহমেদ রনি অপর প্যানেলভুক্ত বলে জানা গেছে। এছাড়া সহযোগী সদস্য পদে যারা মনোনয়ন উত্তোলন করেন তারা হলেন নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, এএনএম আরিফ, মো. কামরুল ইসলাম, সুরেশ কুমার আগরওয়ালা, মো. মাহবুল ইসলাম সেলিম, মো. ইলিয়াস হোসেন ও মো. ওহিদুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার।
নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু হতে না হতেই গতকাল দু’পক্ষের সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের মাঝে কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু সংবাদ সম্মেলনে তার অবস্থান পরিষ্কার করে আলাউদ্দীন হেলা-দেলোয়ার উদ্দীন জোয়ার্দ্দার প্যানেলকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে অপর প্যানেলভুক্ত বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালকসহ ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচনের অযোগ্য বলে দাবি তোলেন। স্বপক্ষে তিনি গত বছরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৫ ডিসেম্বর ঘোষিত গেজেট তুলে ধরেন। তিনি বলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গেজেটের ২১ক ধারায় কেউ একটানা দুই মেয়াদের অধিক নির্বাচন করতে পারবেন না। সেই হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নেয়া বর্তমান সভাপতিসহ ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচনের অযোগ্য হচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনের সময় সাবেক সভাপতির পক্ষে হেলা-দুলু- সালাউদ্দীনের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পরিষদের ১১ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এই সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বিকেলে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে চেম্বারের সাবেক সভাপতির আনীত অভিযোগ উড়িয়ে দেন বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫ মার্চ ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী আমরা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করি। নতুন গেজেট প্রকাশ হয়েছে দেড় মাস পর। নতুন গেজেটে বলা হয়েছে এই গেজেট কার্যকরের দিন হতে নতুন আইন বলবৎ হবে। তিনি আরও বলেন, গত ২০০২ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়, অফিস আদেশ প্রাপ্তির পর ১৫০ দিনের মধ্যে বিশেষ সাধারণসভা আহ্বান করে প্রত্যেক চেম্বার তাদের নিজ নিজ গঠনতন্ত্র সংশোধন করবে। কিন্তু চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান লাভলু চেম্বারের বিভিন্ন মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও গঠনতন্ত্র তৈরি না করে তিনি নিজে প্রায় ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমরা গত ২০১৩-২০১৫ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হই এবং দায়িত্বভার গ্রহণ করি। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখি চেম্বার পরিচালনার জন্য তখনকার বিধি অনুযায়ী কোনো গঠনতন্ত্র নেই। বিধি সম্মতভাবে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণসভায় একটি গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করলে তা সভায় সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়।
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অফিসসূত্রে জানা যায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ২০১৫-২০১৭ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি নির্বাচনী বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করে। সে মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড গত ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখ নির্বাচনের দিন ধার্য করে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একটি নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করেন। এরপর তফশিল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিল করেন। পরবর্তীতে চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু ও পরিচালক রাশেদুজ্জামান মালিক নির্বাচনী বোর্ড ও আপিল বোর্ডের নিকট একটি আপত্তি দাখিল করেন। যা গঠনতন্ত্র পরপন্থি হওয়ায় আপত্তিটি তৎকালীন আপিল বোর্ড খারিজ করে সকল প্রার্থীর প্রাির্থতা বৈধ ঘোষণা করেন। আপিল বোর্ডের রায়কে না মেনে আপত্তি দাখিলকারীদ্বয় এফবিসিসিআই’র আপিল অ্যান্ড আর্বিটেশন বোর্ডে আরও একটি মামলা দায়ের করেন মামলা নং-০২/২০১৫। ফেডারেশনের আপিল অ্যান্ড আব্রিটেশন বোর্ডে দায়েরকৃত মামলা নং-০২/২০১৫ এ নির্বাচন বন্ধ এবং সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি রায় প্রদান করেন। যা ছিলো আইনের পরপন্থি। যার কারণে মহামান্য হাইকোর্টে ২০১৫-২০১৭ নির্বাচনে মো. মঞ্জুরুল আলম মালিক ও একেএম সালাউদ্দিন মিঠু তাদের প্রার্থিতা বৈধ মর্মে একটি মামলা দায়ের করেন যার নং-৫৩৯৯/২০১৫। যা আজ পর্যন্ত চলমান এবং বর্তমান কমিটিও বিদ্যমান রেখেছে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ। একই সালে চেম্বারের পরিচালক রাশেদুজ্জামান মালিক রাশেদ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ওই ৫৩৯৯/২০১৫ নং মামলাটি খারিজ চেয়ে একটি আবেদন করেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান লাভলু, চেম্বার জজ আদালতে ওই ৫৩৯৯/২০১৫ নং মামলাটি খারিজ চেয়ে পুনরায় আর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনটিও চেম্বার জজ আদালত খারিজ করে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেন বলে জানিয়েছেন চেম্বারের বর্তমান কমিটি।