বর্জ পদার্থ ব্যবহার করে দেশে প্রথম জৈবসার কারখানা প্রতিষ্ঠা

 

স্বল্পমূল্যে বাজারজাতকরণ করা হয়েছে কেরুজ জৈব সার

দর্শনা অফিস/বেগমপুর প্রতিনিধি: কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৭৯ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেরুজ চিনিকলের বর্জ পদার্থ মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষণ করে আসছিলো বলেই এলাকাবাসীর ছিলো অভিযোগ। সে সময় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছিলো নানামুখি ববস্থা। সে বর্জ পদার্থ দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জৈবসার। এতে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা, বাড়তি আয় গুনবে বছর বছর। কৃষকরা স্বল্পমূল্যে পাবে জৈবসার। এ উদ্যোগ সফল করেছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। মিল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ও এলাকার চাষিদের চাহিদা পূরণ এবং জমির ঊর্বর ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা ভেবেই প্রতিষ্ঠা করেছে জৈবসার উৎপাদন কারখানা। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জৈবসার কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ দেয় ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চিনিকলের দর্শনার পার্শ্ববর্তী আকন্দবাড়িয়া বীজ উৎপাদন খামারের নিজস্ব জমির ওপর সার কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে সার কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম। ভারতের টরিও চিম টেকনো লিগাল সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় মেশিনারিজ স্থাপনের কাজ করেছে। যন্ত্রাংশ স্থাপনের পরপরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হয় আকন্দবাড়িয়ার সার কারখানায়।

কেরুজ চিনিকলসূত্রে জানা গেছে, এ কারখানায় বছরে ৯ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন করতে পারবে। এ সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনি কারখানার উপজাত প্রেসমাড এবং ডিস্টিলারি কারখানার বর্জ পদার্থ। কাঁচামাল হিসেবে প্রতিবছর ১৮ হাজার মেট্রিক টন প্রেসমাড ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ পেন্টওয়াস ব্যবহার করা হচ্ছে। কেরুজ চিনিকল থেকেই প্রেসমার্ড পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার মেট্রিক টন, বাকি প্রেসমাড দেশের অন্য চিনি কারখানা থেকে সংগ্রহ করছে। এ দুটি বর্জ সার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে এ্যারোবিক কম্পোসটিং পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জৈবসার উৎপাদন করা হচ্ছে আকন্দবাড়িয়া সার কারখানায়। ইতঃপূর্বে এ বর্জ পরিবেশ দূষণের কারণে ফেলে দেয়া হতো মাথাভাঙ্গা নদীতে। এ সার রসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করে চাষিকূল হবে লাভবান। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমবে। সাশ্রয়ী হবে বৈদিশিক মুদ্রা। কেরুজ আকন্দবাড়িয়া সার কারখানায় উৎপাদিত সারের ক্ষেত্রে বিশেজ্ঞরা মনে করেন, রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হ্রাস পায় জমির ঊর্বর ক্ষমতা। যার কারণে প্রতি বছরই একই জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়াতে হয়। কেরুজ উৎপাদিত জৈবসার ব্যবহারে মাটির ঊর্বরতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, দূর করবে মাটির বিষাক্ততা। সর্বোপরি জৈবসার ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করবে। কারখানা পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সার উৎপাদন করা হয়েছে ১ হাজার ৮শ মেট্রিক ট্রন। এরই মধ্যে প্রায় ১ হাজার মেট্রিকটন সার বিক্রি করা হয়েছে। ৫০ কেজির প্যাকেটির এ সার বাজারজাতকরণের সরকারি অনুমোদন মিলিছে গত মাসের ৩ তারিখে। শুরুতেই চাষিমহলে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এরই মধ্যে কেরুজ উৎপাদিত সার বাজারজাতকরণ, মূল্য নির্ধারণ ও গুণগতমান পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। চাষিদের সুবিধার্থে শুধুমাত্র উৎপাদন খরচ হিসেবেই প্রতিকেজি সারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। সার কারখানাটি চালু হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হয়েছে, অন্যদিকে কেরুজ চিনিকলের স্পেন্ট ওয়াসের কারণে মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষিত হবে না। তবে কারখানা সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেকটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুত সংযোগ। এ বিষয়ে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন বলেন, বেশি বেশি করে কেরুজ উৎপাদিত জৈবসার ব্যবহার করে জমির ঊর্বরতা বাড়ান। স্বল্পমূল্যে সার কিনে ফসল চাষে লাভবান হোন।