বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিমুখি সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার: বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পুলিশ ও বাম শ্রমিকদের ত্রিমুখি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক। এতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ সদস্য আহত হয়েছেন। গতকাল এসব ঘটনা ঘটে। বাস শ্রমিকরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে মারধর করার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও যানবাহন ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে এলে তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর শর্টগানের ৩৭ রাউন্ড গুলি ও ৭টি গ্যাস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭জন শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ সদস্য আহত হয়। তাদেরকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতির সাথে বৈঠক চলছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নাঈম উদ্দিন মিঠু রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালীগামী একটি বাসে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য। আ. রব সেরনিয়াবাত সেতু পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাস কন্ডাক্টরকে গাড়ি থামাতে বলেন ওই ছাত্র। কিন্তু বাস থামানো হয় আরও আধা কিলোমিটার দূরে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাঈম উদ্দিন মিঠুকে বাস কন্ডাক্টর ও হেলপার মারধর করে। তখন ওই ছাত্র তার সহপাঠীদের মোবাইলফোনে খবর দেয়। এ সংবাদ ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী এবং বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা রুটের সড়ক অবরোধ করে। গতকাল সকাল ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত চলে অবরোধ। এতে বরিশাল-ভোলা, বরিশাল-পটুয়াখালী এবং বরিশাল-কুয়াকাটা রুটের সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের দু পাশে আটকে পড়ে অর্ধশত যানবাহন। এরপর কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য বলে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ তুলবে না এমন ঘোষণা দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ৭ টি গ্যাস গ্রেনেড ও ৩৭ রাউন্ড শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে ৭ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নাঈম উদ্দিন মিঠু, একই বিভাগের সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আক্তারুজ্জামান মিতুল, একই বিভাগের নাসিম উদ্দিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গোলাম মুহাইমিন সজল, মৃত্তিকা বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহ নেওয়াজ ও একই বিভাগের শান্ত। আহত শিক্ষার্থীদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের হামলায় র‌্যাবের হাবিলদার আসাদ ও পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন বলেন, গতকাল সকাল ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের চারটি দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাস থামানো, স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, ভাড়া কমানো ও শিক্ষার্থীদের সাথে যাতে কখনও খারাপ আচরণ না করা হয় এ সবগুলো নিয়ে আলোচনায় বসার কথা ছিলো। কিন্তু এর আগেই এক শিক্ষার্থী বাসে ভাড়া না দিয়ে যেতে চাইছিলো। ভাড়া আদায় নিয়ে ফের বাস শ্রমিকদের সাথে তাদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এরপরও বিদ্যমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আ. রউফ বলেন, বাস ভাড়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে বাস শ্রমিকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। এতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল-ভোলা সড়ক অবরোধ করে রাখে। অবরোধ থেকে সরে গিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে বললে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের ৩৭ রাউন্ড গুলি ও ৭টি গ্যাস গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পর এখন পরিস্থিতি শান্ত বলে জানান তিনি।