বজ্রপাত : গাংনীর এক গৃহবধূসহ নিহত ৫

আকাশে মেঘ বাতাসে জলীয় বাষ্প : ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৫ জনের অধিক। গতকাল পৃথক সময়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বৃষ্টি হলেও চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় মানুষ ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার। এতো বৃষ্টির পরও অসহনীয় গরম কেন? ভেজা মাটিতে সূর্যের তাপ পড়তেই ভূপরিমণ্ডলে বেড়ে যাচ্ছে জলীয় বাষ্প। সে কারণে এমনটি হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় দু মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশে গতকাল সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৭০ মিলিমিটার। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ছিলো ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারে ২৪ দশমিক ৫ আর চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ রাজস্তান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ১/২ হয়ে পূর্ব দিকে মনিপুর অতিক্রম করে, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামোটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাঁড়াবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে দুই সন্তানের জননী আইমা খাতুন (২৮) নিহত হয়েছেন। একই সময়ে সদর উপজেলার গোভীপুর ও গাংনী উপজেলার রামনগর ও তেরাইল গ্রামে বজ্রপাতে আরো ছয় জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আইমা খাতুন গাঁড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক কালু শেখের স্ত্রী। তার সাত বছর বয়সী এক ছেলে ও ১৫ মাস বয়সী এক কন্যা শিশু রয়েছে। স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, বিকেল পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ জমে। কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাত শুরু হয়। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বজ্রপাতে আইমা খাতুনের শরীর ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মরদেহ নিজ বাড়িতে নেয়া হয়েছে। এদিকে একই সময়ে গোভিপুর গ্রামের কৃষক জামসুদ্দীনের স্ত্রী নাছেরা খাতুন উঠোনের এক পাশে টিউবওয়েলের পানি নেয়ার সময় বজ্রপাতে আহত হন। তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে একই সময়ে গাংনী উপজেলার রামনগর গ্রামে বজ্রপাতে আরও ৫ জন ও তেরাইল গ্রামে একজন আহত হয়েছে। তাদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে রামনগর গ্রামের আফছার আলীর ছেলে মতিয়ার (৩০), ইসমাইল হোসেনের মেয়ে শুকজান খাতুন (৪৫), শাহজাহান আলীর ছেলে বেল্টু মিয়া (৩০), ফারুক হোসেনের ছেলে ইউসুফ (২০) ও জনি মিয়া (১৫) এবং তেরাইল গ্রামের ইন্তাজ আলীর স্ত্রী ফহিমা খাতুন (৩০)। বাড়িতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তারা বেঁহুশ হয়ে পড়েন। পরে বামন্দীর দুটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত বলে জানান চিকিৎসক।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মিরপুরে বজ্রপাতে রফিকুল ইসলাম রফিক (১৭) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, বজ্রপাতের সময় ওই কিশোর মাঠে ঘাস কাটতে যায়। সে একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেয়। হঠাত বজ্রপাত হলে রফিক মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মিরপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কিশোর মাধবপুর গ্রামের টানু মালিথার ছেলে ও বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

শেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শেরপুরে বজ্রপাতে জোসনা মিয়া (৫৫) নামের এক কৃষক মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন একই গ্রামের আফালী মিয়ার ছেলে আহালু মিয়া (৪০) ও আক্তার আলীর ছেলে চান মিয়া (১৫)। তাদের শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেরপুর জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ইএমও) মো. আসাদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় মিয়া হোসেন (৪৫) নামের আরও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নালিতাবাড়ী পৌরসভার কালিনগর এলাকার উমেদ আলীর ছেলে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জমিতে কাজ করার সময় তিনি বজ্রপাতে মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মসিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে শরিফুল ইসলাম (৩৮) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার তালুক কানুপুর ইউনিয়নের সমসপাড়া নুনদহ গ্রামের আবদুস ছামাদের ছেলে। তালুক কানুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে শরিফুল বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে মাছের খাবার দিতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিযেছেন, চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও কচুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার দক্ষিণ রামপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় নাছিমা বেগম (৪০) নামের এক গৃহিণীর মৃত্যু হয়। তিনি ওই এলাকার বাবুল মিয়ার স্ত্রী। নাসিমা বজ্রপাতে ঝলসে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে আমিরাবাদ বাজারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে চাঁদপুরের কচুয়ায় বিল্লাল প্রধান (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের বুধুন্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিল্লাল বুধুন্ডা গ্রামের জাফর আলী প্রধানের ছেলে। বিল্লাল বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিলে ঘাস কাটতে গেলে বজ্রপাতে মারা যান।