বগুড়ায় অস্ত্রসহ আলীগ ও যুবলীগের ৬ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া ডিবি ও গাবতলী থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে শহরতলির ছাতিয়ানতলা এলাকা থেকে ১৪ রাউন্ড গুলিভর্তি চারটি বিদেশি পিস্তলসহ হত্যা ও বিভিন্ন মামলার আসামি আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের ৬ ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে। তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস বের করতে সন্ত্রাসীদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৃহস্পতিবার থেকে তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গ্রেফতারকৃত অস্ত্রধারীরা হলো- বগুড়া শহরের ধাওয়াপাড়ার মৃত খলিলুল রহমান চাঁনের ছেলে শহর আওয়ামী লীগ কর্মী জামিলুর রহমান শুভ (৩৫), তার পিএসখ্যাত দক্ষিণ ধাওয়াপাড়ার মৃত আবদুল ওয়াহাবের ছেলে একই সংগঠনের কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা (৪২), একই এলাকার মৃত আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে রাজিব সুলতান মাশুক (২১), নাটাইপাড়ার মৃত ওয়াহেদ বকসের ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (২০), শাজাহানপুর উপজেলার দড়িনন্দগ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে যুবলীগ কর্মী আবদুল হাদী (৫৩) এবং একই উপজেলার মাদলার চাঁচাইতারা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে সুরুজ মিয়া (৩২)।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সায়ফুজ্জামান ফারুকী ও আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ডিবি ও গাবতলী থানা পুলিশ শহরতলির ছাতিয়ানতলা রঞ্জু কাজীর অটো রাইস মিলের সামনে পাকা রাস্তায় একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-০৫০৯) থামিয়ে তল্লাশি করে। গাবতলী থেকে বগুড়ার দিকে আসা ওই কারে চালকের আসনে থাকা শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কয়েকটি হত্যা মামলার আসাম জামিলুর রহমান শুভর প্যান্টের কোমড়ে ৯এমএম ও ৭.৬৫ ক্যালিভারের দুটি বিদেশী পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন, আবদুল হাদীর কাছে ৭.৬৫ ক্যালিভারের একটি বিদেশী পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন এবং আনোয়ারুল ইসলাম রানার কাছে ৯এমএম ক্যালিভারের একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিনসহ মোট চারটি পিস্তল, ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও চারটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। কারে থাকা মনির, মাশুক ও সুরুজ মিয়ার কাছে কিছু পাওয়া যায়নি। এর আগে শুভ গাবতলীতে পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। তখন গাবতলী থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন ফোর্স নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, সন্ত্রাসী শুভ শহরের চেলোপাড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা নাসিম ও রঞ্জু জোড়া খুনের প্রধান আসামি, সংলাপ হত্যা মামলার ২নং আসামি এবং খোকন হত্যা মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি। তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় তিনটি চাঁদাবাজি ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে। হাদী ২০০৩ সালে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সৈনিক সাইফুল হত্যা মামলায় ১০ বছর সাজাভোগ করেছে। গত ৬ মার্চ শাজাহানপুর থানায় চাঁদাবাজির মামলায় হাজতভোগ করে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গ্রেফতার ড্রাইভার সুরুজ এবং ছাত্র মনির ও মাশুক মঙ্গলবার রাতে গাবতলীতে এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই প্রাইভেট কারে বগুড়ার দিকে ফিরছিল। পথিমধ্যে পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই কারে সন্ত্রাসী শুভ, হাদী ও রানা ওঠে। শুভ গাবতলীতেই পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। খবর পেয়ে গাবতলী থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন তাদের প্রাইভেট কারটি ধাওয়া এবং বগুড়ার পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। গাবতলী থানা পুলিশ ও বগুড়া থেকে আসা ডিবি পুলিশের দল শহরতলির ছাতিয়ানতলায় কারটি থামিয়ে অস্ত্রসহ উল্লিখিত ৬ জনকে গ্রেফতার করেন। কারের মালিক জনৈক ইট ব্যবসায়ী সুমন। ফাঁকা গুলি বর্ষণের সত্যতা গাবতলী থানার ওসি নিশ্চিত করেছেন।

বগুড়া ডিবি পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর আবু সিদ্দিকী বুধবার সদর থানায় মামলা করেছেন। এছাড়া আসামিদের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে আদালত তাদের সবার বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা সন্ত্রাসী। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা নেই। এদিকে গুলিভর্তি চারটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী শুভসহ ৬ জন গ্রেফতার হওয়ায় পূর্ব বগুড়ার মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।