ফৌজদারি অপরাধে পদ হারাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা

সিলেটের মেয়র বরখাস্ত : ঙ্কায় গাজীপুর রাজশাহী

 

স্টাফ রিপোর্টার: নাশকতাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পদ হারাচ্ছেন নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি। এসব জনপ্রতিনিধির মধ্যে আছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার। ইতোমধ্যে ওইসব অভিযোগে পদ হারিয়েছেন বা হারানোর পথে রয়েছেন যারা তাদের সবাই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দলের সমর্থক।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক বলছেন, কোনো দলীয় বিবেচনায় নয়, যারাই ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন বা আইন পরিপন্থি কাজের সাথে জড়িত থাকছেন তাদের বিরুদ্ধেই সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও এরকম অভিযোগে কেউ অভিযুক্ত হলে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কে কোন দলের সমর্থক তা বিবেচনা করা হয় না।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধি যেকোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (চার্জশিট আদালত কর্তৃক গ্রহীত) হলে কিংবা ওই প্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। এ আইনের বিধান বলেই ইতোমধ্যে একজন মেয়র, ১৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১০২ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হককে গত ৭ সেপ্টেম্বর তার পদ থেকে সাময়িক অপসারণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাকে করাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন কারা হাসপাতালে আছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধেও সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। করপোরেশনের কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য সেখানে প্যানেল মেয়রকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায়, আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তদন্তকারী সংস্থা যদি চার্জশিট দেয় এবং তা যদি আদালত কর্তৃক গৃহীত হয় তবে তাকেও পদ থেকে অপসারণ করা হবে। এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নাশকতার মামলা দায়ের করার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। আত্মগোপনে থেকেই তিনি দাপ্তরিক কাজ চালালেও এক্ষেত্রে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, যদিও তিনি এ মামলায় জামিনে আছেন। কিন্তু নাশকতার তিনটি মামলায় এখনো চার্জশিট হয়নি বা তিনি জামিনও নেননি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলার চার্জশিট সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে এখনো আসেনি, এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে নাশকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় উপজেলা পরিষদের যেসব চেয়ারম্যানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন, রাজশাহীর চারঘাটের আবু সাইদ চাঁদ, গাইবান্ধা সদরের আব্দুল করিম, সুন্দরগঞ্জের পলাশবাড়ীর আবুল কাওছার মোহাম্মদ, গোবিন্দগঞ্জের ফারুক কবীর আহমেদ, বগুড়ার নন্দিগ্রামের নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের নুরুল আমিন, বগুড়ার সোনাতলার একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, পাবনার চাটমোহরের হাসাদুল ইসলাম হীরা, পিরোজপুরের নাজিরপুরের নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মাও. আব্দুল বারী এবং চাপাইনবাবগঞ্জের সদরের মোখলেসুর রহমান। এছাড়া কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সারওয়ার জাহান ভাইস চেয়ারম্যান সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হয়েছে। সেখানে উপনির্বাচনও হয়ে গেছে জিতেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।

অপসারিত ভাইস চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন, সুন্দরগঞ্জের আবু সোলায়মান সরকার, পলাশবাড়ীর আবু তালেব সরকার, রাজশাহীর বাগমারার নাজমূল হক, বগুড়ার শেরপুরের আরিফুর রহমান, দুপচাঁচিয়ার মোত্তালেব হোসেন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শাহজাহান আলী, খুলনার ফুলতলার গাওসুল আযম মোল্লা এবং মৌলবীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রেম সাগর হাজরা। এসব অপসারিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা চালাচ্ছেন। যেসব জায়গায় মামলা নেই সেসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় শুনানি করছে। শুনানি শেষে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হবে।

সূত্র জানায়, দেশের ৬১টি জেলার চেয়ারম্যান ও মেম্বার মিলিয়ে ১০২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে সারাদেশে পরিচালিত নাশকতায় এরা সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের এক বছর পর সম্প্রতি থেমে থাকা নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।