ফাঁস হওয়া প্রশ্নে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের অর্ধেক পরীক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষাবোর্ড কর্তাদের টনক নড়ছে!

ইংরেজি প্রশ্ন মিলের পর প্রশ্নবাণিজ্য তুঙ্গে : তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে টনক নড়েছে শিক্ষা বোর্ডের কর্তাদের। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) অর্ধেক পরীক্ষা গ্রহণের পর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে আছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক ফজলে এলাহী, উপসচিব নাজমুল হক ও আবুল হোসেন মোল্লা।

অপরদিকে একটি সূত্র বলেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সম্ভবত একই উৎস থেকে। তার আলামত ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে।

সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে শনিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রশ্নপত্রের ছাপানো কপি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতে দেখা গেছে। শনিবার প্রশ্ন ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কুড়িগ্রামে জেএসসির প্রশ্নপত্র বিক্রির সময় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইংরেজির প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর সারাদেশে প্রশ্নবাণিজ্য শুরু হয়েছে। ফাঁস হওয়া বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নে মিল না পাওয়া গেলেও গণিত প্রশ্ন নিয়ে একইভাবে বাণিজ্যে মেতেছে অভিন্ন চক্র।

ফাঁস হওয়া ইংরেজির প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর সারাদেশে প্রশ্নবাণিজ্য শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম, রংপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, খুলনা, চাঁদপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাজেশনের নামে কোথাও ছাপানো আবার কোথাও হাতে লেখা কথিত প্রশ্নপত্র বিক্রির হিড়িক পড়ে। অভিভাবকরা জানান, দেশে বিভিন্ন স্থানে এর আগে ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্ন পেয়েছিলেন তারা। এরপর ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নের নামে (‘ক’ ও ‘খ’ সেট হিসেবে দুটি সেট) বাজারে যা পাওয়া যায়, তার সাথে পরীক্ষার পর মূল প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়ায় তারা এক রকম হতভম্বই হয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে একইভাবে তাজ্জব বনে গেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও। অবশ্য শনিবারের বিজ্ঞানের পরীক্ষা শেষে আগের দু দিন বাজারে পাওয়া প্রশ্নের সাথে মিল পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর অভিভাবকদের প্রশ্নের পেছনে ছোটা কিছুটা কমেছে। এরপরও গত কয়েক দিন ধরে গণিতের নামে কথিত প্রশ্ন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। আজ জেএসসির গণিত আর জেডিসির (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা নেয়ার সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, বিষয়টি তারা অভিযোগ আকারে নিচ্ছেন। তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের মতামত জানাবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী ঢাকায় ফিরলে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু তারপরও পরীক্ষার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ব্যাপারে মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী জানান, ‘আমি মোট দুটি প্রশ্নের ব্যাপারে অবহিত করি। এর একটি ইংরেজি আরেকটি বাংলা। কে আমাকে দিয়েছে তা এ মুহূর্তে বলতে পারবো না। কেননা বিভিন্ন হাত ঘুরে তা আমার হাতে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার পর অবশ্য আমি তা মিলিয়ে দেখিনি যে কতোটুকু মিলেছে। তবে আমাকে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সাজেশনে যতোটুকু মেলে ততোটুকু মিলেছে। এর বেশি কিছু মেলেনি।’ ডিসি ফারুকী আরও জানান, ‘আমি যে দুটি প্রশ্ন পাঠাই তার মধ্যে বাংলা বিষয়টি পেয়েছি পরীক্ষার পরে।’ সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) এএস মাহমুদ বলেন, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রীর সাথে আলাপ শেষে করণীয় জানানো হবে।

নাম প্রকাশ না করে ঢাকা বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তারা মনে করছেন যে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে একই উৎস থেকে। কেননা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রিপজিশন বিষয়ক প্রশ্নটির যতোটুকু লেখার পর ডট দেয়া শুরু হয়, তারা জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নেও সেভাবে পেয়েছেন। অন্যান্য প্রশ্নের ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা গেছে। এ থেকে তারা মনে করছেন যে, একটি মাত্র উৎস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, যা পরবর্তীতে ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপি। ওই সূত্র আরও জানায়, পর্যালোচনায় এসব বিষয় বের হওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।

জানা গেছে, ইংরেজিসহ অন্যান্য প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে ঢাকা বোর্ডের উপপরিচালক ফজলে এলাহীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দু সদস্য হলেন- উপসচিব (প্রশাসন) নাজমুল হক ও উপসচিব (বৃত্তি) আবুল হোসেন মোল্লা। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।