ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ খুন

স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ (৭৮) খুন হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে ৬৩ পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডের বাসা থেকে পুলিশ তার হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ উদ্ধার করে। চারতলা বাসভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে একাকী থাকতেন আফতাব আহমেদ। ২০০৬ সালে একুশে পদক পাওয়া আফতাব আহমেদ ফটোসাংবাদিক হিসেবে প্রায় ৪০ বছর দৈনিক ইত্তেফাকে কর্মরত ছিলেন।
প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব আহমেদের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসান সাংবাদিকদের জানান, আফতাব আহমেদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ডাকাতি কিংবা টাকা-পয়সা আত্মসাতের জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। বাসার মালামাল এলোমেলো ও আলমারিসহ বিভিন্ন ঘর তছনছ অবস্থায় দেখে তাদের এমনটি মনে হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আফতাব আহমেদের গাড়িচালক কবিরকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ গৃহকর্মী নাসিমাকে আটক করেছে। নিহতের মেয়ের জামাই ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ৬৩ পশ্চিম রামপুরার চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় একাকী থাকতেন তার শ্বশুর আফতাব আহমেদ। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মনোয়ার আহমেদ থাকেন তার কর্মস্থল যশোরে। আর মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সাথে থাকেন গাজীপুরে। বাড়ির অন্য তলার ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেয়া। মাঝে-মধ্যেই তিনি ও তার স্ত্রী রামপুরায় এসে শ্বশুরকে দেখে যেতেন।

আফতাব আহমেদের প্রতিবেশী সাজ্জাদ হোসেন জানান, দিনের বেশিরভাগ সময়ই তৃতীয় তলায় নিজ ফ্ল্যাটেই একাকী থাকতেন তিনি। বিকেলে বাসার সামনে হাঁটাহাঁটি করতেন। মাঝে-মধ্যে গাড়ি নিয়ে যেতেন প্রেস ক্লাবসহ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। অপর প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে গৃহকর্মী নাসিমা সকালের রান্না করতে গিয়ে তৃতীয় তলায় গ্রিলের গেটটি বন্ধ দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকির পর সাড়াশব্দ না পেয়ে ভাড়াটিয়াসহ প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান। প্রতিবেশীরাও এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। গলায় বিছানার চাদর পেঁচানো অবস্থায় দেখে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে তারা আফতাব আহমেদের মেয়ে আফরোজা ও ফারুক আহমেদকে খবর দেন। বিষয়টি জানার পর ফারুক আহমেদ রামপুরা থানা পুলিশে খবর দিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে পুলিশ এসে আফতাব আহমেদকে তার বেডরুমে হাত-পা বাঁধা ও গলায় চাদর পেঁচানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এছাড়া তিনি যে খাটে ঘুমাতেন সেখানে রক্ত দেখতে পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় খাটের সাথে আঘাত করায় তার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আফরোজা আহমেদ বিষয়টি জানার পর ফোনে খবর দেন তার বাবার বন্ধু প্রবীণ সাংবাদিক জহিরুল হককে। তিনিও খবর পেয়ে ছুটে আসেন রামপুরার বাসায়।