প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাত : পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপে রানা গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্কুলছাত্রীর পাশে জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার সিভিল সার্জনসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহপাঠীরা
স্টাফ রিপোটার: প্রেমের রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রীকে ছুরি মেরে আহত করেছে এক বখাটে। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশে রওনা হয়ে পথিমধ্যে ওই স্কুলছাত্রীর ওপর হামলা চালায় বখাটে রানা হোসেন (১৮)। পুলিশ তাকে আটক করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র ছুরি।
কোমরে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত স্কুলছাত্রীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে তাকে। আহত স্কুলছাত্রীর অভিযোগ, বখাটে রানা প্রায় তিন-চার মাস ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত ও প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতিকে জানানো হয়েছিলো। বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলে রাব্বী গতকাল মঙ্গলবার রানাকে ডেকে বকাঝকা করেন। গতকাল বুধবার সকালে দুলাভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় হাজরাহাটি-শ্মশান মোড় সড়কের কবরস্থানের নিকট সকাল ৯টার দিকে রানা পথ আগলে দাঁড়ায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরিকাঘাত করে। এ সময় স্কুলছাত্রীর দুলাভাইয়ের সাথে রানার ধস্তাধস্তিও হয়। পাশের লোকজন ছুটে আসার আগেই মাঠের দিকে রানা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ও সদর থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুধবার দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকা থেকে রানা হোসেনকে আটক করে। আটকের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে রানাকে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে রানা হোসেনসহ ৫জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় উত্ত্যক্ত ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। আটক রানা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ওয়ালিউর রহমান বলেন, আহত স্কুলছাত্রীর কিডনির নিচে আঘাত লেগেছে। তবে সে শঙ্কামুক্ত। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, রানা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা সড়কে অবস্থিত একটি ফিলিং স্টেশনে কাজ করে। সে শ্মশানপাড়ার কাজলের ছেলে। তাকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। অপরদিকে গতকালই বিকেলে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম ও সিভিল সার্জন খায়রুল আলম আহত ছাত্রীকে দেখতে সদর হাসপাতালে যান। সিভিল সার্জন খায়রুল আলম বলেন, আহত স্কুলছাত্রীর পুরো চিকিৎসাসেবা বিনা খরচে দেয়া হবে। স্কুলছাত্রীর বাবার হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলায় ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনা শোনার পরই দ্রুত অভিযান চালিয়ে রানা হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তার যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সে ব্যাপারে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সাথে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রীকে দেখতে এসে এ তথ্য জানান। এছাড়া বিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও গতকাল তাদের সহপাঠীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান।
প্রসঙ্গত: স্কুলছাত্রীর প্রতি সম্মান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকা হলো।