প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা : খাতা পুনর্নিরীক্ষণে চুয়াডাঙ্গায় দুর্নীতি!

স্টাফ রিপোর্টার: পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও পুনর্নিরীক্ষণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) গোলাম নবী এ অনিয়ম করে অর্থ লোপাট করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন অভিযোগকারীরা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে।

জানা গেছে, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এডিপিইও) গোলাম নবী গত ৩ নভেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ডিপিইওর দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ১৮ হাজার ৬১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয় ১৭ হাজার ৮৪ জন। অকৃতকার্য হয় ১ হাজার ৮২৯ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন। জানুয়ারি মাসে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি সমালোচিত হয়। এদিকে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে ৬২০টি আবেদন জমা পড়ে। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রধান পরীক্ষকসহ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (পিটিআই) একজন ইন্সট্রাক্টরকে দায়িত্ব দেন ডিপিইও। তদারকির দায়িত্ব পান এডিপিইও এসএম আবদুর রহমান। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষাকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষকদের কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ পান। তারা জানতে পারেন, নম্বর না দেয়া, খাতার ভেতরে নম্বর থাকলেও ওপরের পাতায় (টপ শিটে) না তোলা এবং যোগে ভুলসহ নানা ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে মাত্র ৫ শতাংশ খাতা মূল্যায়ন করা এবং প্রশিক্ষিত পরীক্ষকেরা যথাযথ নম্বর না দেয়ায় ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পুনর্নিরীক্ষা শেষে কমিটি ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন করে সংশোধিত নম্বরফর্দ ভারপ্রাপ্ত ডিপিইও গোলাম নবীর কাছে জমা দেন। পরবর্তী সময়ে গোলাম নবী সংশোধিত নম্বরফর্দের বাইরে আরও ১৯১ জনের ফল একক ইচ্ছায় পরিবর্তন করেন। সব মিলিয়ে ২৭৬টি উত্তরপত্রের ফল পরিবর্তন হয়। এতে জিপিএ পরিবর্তনসহ অকৃতকার্য অনেককেই পাস দেখানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, গোলাম নবী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একক উদ্যোগে এসব পরিবর্তন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জেলায় বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তনকে অস্বাভাবিক চিহ্নিত করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়। অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে ওই কর্মকর্তা অভিযোগের প্রমাণ পান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুনর্নিরীক্ষার প্রতিটি আবেদনপত্রের সাথে ২০০ টাকা হারে মোট ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে জমা পড়ে। ২২ জানুয়ারি নতুন ডিপিইওর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার আগেই গোলাম নবী ওই টাকা তুলে নিজের হিসাবে রাখেন। এর মধ্য থেকে আটজন প্রধান পরীক্ষককে সম্মানী বাবদ এক হাজার টাকা করে দিয়ে টাকার অঙ্ক লেখার ঘর ফাঁকা রেখে কাগজে সই করিয়ে নেন এবং অনুগত কর্মচারীদের কিছু দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন।
গোলাম নবী বলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নে আমার একক কর্তৃত্ব নেই। অর্থ লুটপাটের অভিযোগও অবান্তর। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এডিপিও এসএম আবদুর রহমান বলেন, উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষার জন্য গোলাম নবী আমাকে একটি টাকাও দেননি। প্রধান পরীক্ষকদেরও ঠকিয়েছেন। তাঁর দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, গোলাম নবী ভারপ্রাপ্ত ডিপিইওর দায়িত্ব পালনকালে চরম স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষা বাবদ সংগৃহীত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।