প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি : সমাপনী চূড়ান্ত মডেল টেস্ট অনিশ্চিত

স্টাফ রির্পোটার: প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির ফলে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া চূড়ান্ত সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষা গ্রহণে অনিশ্চিত দেখা দিয়েছে। জেলার ৪৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ সব বিদ্যালয়ের প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষা গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ উপজেলাওয়ারী সমাপনী পরীক্ষার আদলে খাতা তৈরির কাজও সমাপ্তির পথে। এরই মধ্যে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে দেশব্যাপি রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষকরা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা ফিরে পেতে আজও ৩ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন। তাদের দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার থেকে পূর্ণদিবস অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। অপরদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকদের চারটি সংগঠন নিয়ে গঠিত জোট প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশন ৬ দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমেছে। গতকাল তারা সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন। একইভাবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। ১০ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং আগামী ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে ১২,৫০০ টাকার স্কেলে পুনর্নির্ধারণ করা। সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে নিয়োগ দিয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত শতভাগ পদোন্নতির সুযোগ প্রদান করা। প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রি নির্ধারণ করা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করা এবং সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করাসহ দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা ও নন-ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা। এদিকে সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি লিটন আলী জোয়ার্দ্দার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ফেডারেশনের দেয়া কর্মসূচি পালনে অধিক আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

দামুড়হুদা উপজেলার সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশীদ জুয়েল বলেন, আমরা শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। আমাদের ঠিকানা বিদ্যালয়। আমরা রাজপথে নামতে চাই না। শিক্ষাক্ষেত্রে এ অচলবস্থা নিরসনের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশব্যাপি চলমান কর্মবিরতিতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে না যাওয়ায় বিশেষ করে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় আজ সকাল ৯টায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।