প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক ব্যবসায়ীদের সকল সংগঠন

মন্তব্য প্রতিবেদন ……………………………

রফিকুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গায় কয়েকটি দৃশ্য প্রায় একই চেহারা নিয়ে ফিরে আসে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধযান বন্ধের দাবিতে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ধর্মঘট এবং তা প্রত্যাহারে প্রশাসনের তরফের প্রতিশ্রুতিসহ পুলিশের কয়েকদিনের নড়াচড়া। আর একটু বিলম্বে হলেও অভিন্ন চিত্র নিয়ে হাজির হয়, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা শাখার নির্বাচন। নির্বাচনের পর মেয়াদ নিয়ে নির্বাচিতদের যেন মাথাব্যথাই থাকে না, তারপর যখন নির্বাচন হয় তখন দুটি প্যানেলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অনিবার্য হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই দুটি প্যানেলের পৃথক কার্যক্রম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নতুন পুরাতনের মিশ্রণে বিভক্ত প্যানেল দুটির নির্বাচনি এস্তেহার অবশ্য এখনও প্রকাশ পায়নি। দুটি প্যানেলই নিশ্চয় তাদের এস্তেহারে সমিতির তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসেবে সচ্ছতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তরিক হওয়ারই কথা তুলে ধরবেন।
বণিক শ্রেণির তথা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের স্বীকৃত মূল সংগঠন হলো- শিল্প ও বণিক সমিতি। চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘদিন ধরে এ সংগঠনটির নির্বাচন আটকে আছে আইনি জটিলতায়। অবশ্য তার আগে সংগঠনের শাসনতন্ত্রে একই ব্যক্তির পরপর নেতৃত্বে আসা- না আসার বিষয়ে আকস্মিক সংশধোনীই যে স্থবিরতার জন্য বেশি দায়ী তা দায়িত্বশীলেরাও নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। শিল্প ও বণিক সমিতির পাশাপাশি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা দেশের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ সৃষ্টিকারী একটি পেশাজীবী সংগঠন। চুয়াডাঙ্গায় এ সংগঠনের আহ্বানে পিনপতন নীরবতার মতো স্থানীয় হরতাল পালিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওপর অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন বন্ধের আন্দোলনও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার গোড়াপত্তনে যে নেতৃবৃন্দ অগ্রভাগে ছিলেন তাদের দুজনই এখন গত হয়েছেন। আছির উদ্দীন আশু মিয়া আর হাজি ফতে আলী বিশ্বাস নাম দুটি দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা শাখার শিরা-উপশিরায় যেন মিশে আছে। অবাক হলেও সত্য যে, এ দু নেতার নেতৃত্বে থাকাকালেও সংগঠনটি পরিচালনার পরিষদের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্কের একপর্যায়ে ঘোষিত হয়েছে নির্বাচনী তফশিল। এরপর দুটি প্যানেলকে ভোটযুদ্ধে নেমে সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকেই যেন নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। সেই শুরুর শুরুতেই শুধু নয়, সর্বশেষ নির্বাচনের পরও পূরণ ছবিই যেন সদস্যদের মাঝে ফিরে এসেছে। অবাক হলেও সত্যি, সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটিও মেয়াদের কথা ভুলে শেষ পর্যন্ত কিছুদিন বাড়িয়ে অবশেষে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পথে হেঁটেছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজ ফুটে উঠতে শুরু করেছে। আসন্ন নির্বাচনে নিশ্চয় যোগ্য নেতৃত্বকেই নির্বাচিত করবেন সমিতির সদস্যরা। নির্বাচন এমনই এক সুযোগ, যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সত্যিকার নেতাকেই নেতৃত্বের আসনে বসানো যায়। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দুটি প্যানেলের মধ্যে বর্তমান কমিটির সভাপতি আশাবুল হক মালিক লেমন, সহসভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ও নতুন আত্মপ্রকাশ করা প্যানেল হাজি সালাউদ্দীন চান্নু, হাজি সামসুল আলম বাবু ও হাজি মাসুদুর রহমান মাসুদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। আরও প্যানেল কিংবা পৃথকভাবে কোনো পদে এককভাবে প্রার্থী হলে হতেও পারে। প্রার্থী সংখ্যা দোষের কিছু নয়, বরঞ্চ ভালো।
সংগঠনের নেতৃত্বে তাদেররই মানায় যারা সাংগঠনিক এবং সংগঠনের নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক। যদিও এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রায় প্রতিটি পেশাজীবী সংগঠনেই রাজনৈতিক প্রভাবব স্পষ্ট। নেতাকে তুষ্ট করার মতো তোষামদ অনিবার্যকরণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তোষামোদকারীদের কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘সদস্যরা আমাকেই চায়, আমি ছাড়া সংগঠনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে না, অন্যের হাতে নেতৃত্বে যাওয়া মানে তহবিল তছরুপ হওয়া, সংগঠন বিক্রি হয়ে যাওয়া।’ এসব উক্তির মধ্যে শুধু যে আমিত্ব জাহিরই থাকে না, সংগঠনটিকেও পৈত্রিক সম্পদের মতো ভাবছে বলেই মনে হয়। যদিও অভিজ্ঞতা কিংবা পরীক্ষিত নেতার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশ দোকান মলিক সমিতির নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হোক। একই সাথে শিল্প ও বণিক সমিতির নির্বাচনী জটিলতা নিরসনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উদ্যোগী হোক। প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক ব্যবসায়ীদের সকল সংগঠন।