প্রস্তুত হচ্ছেন জোবাইদা

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি ভেঙে পরবর্তী নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পাল্টা কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে অযোগ্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সামনে এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর সেভাবেই প্রস্তুতিও নিচ্ছেন জোবাইদা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ভাঙার ও মামলা দিয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আগামী সপ্তায় সৌদি আরবে এ নিয়ে কথা বলতে পারেন। সেখানে থাকবেন ডা. জোবাইদা রহমানও।

বিএনপি সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক থাকায় মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে সে নির্বাচনেও বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিএনপিকে বিভক্ত ও শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ফন্দি আটছেন ক্ষমতাসীনরা। এজন্য বাড়তি সতর্কতা থাকলেও আতঙ্কিত নয় বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। দীর্ঘ আন্দোলনে ব্যর্থতা, বর্তমান বিএনপিকে দিয়ে হবে না- এমন প্রচারণা, শীর্ষ নেতাদের সাজা হওয়ার আশঙ্কা, শীর্ষ কয়েক নেতার ফোনালাপ ফাঁসসহ বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি দলের ভাঙনের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে। এরপরই শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে আলোচনা করেন হাইকমান্ডের সাথে। তবে এ ইস্যুতে তারা উদ্বেগের কোনো ছাপ দেখেননি বিএনপি চেয়ারপারসনের চেহারায়। নেতাদের মতে, ভাঙন নিয়ে চিন্তিত নন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ নিয়ে তার আগাম পরিকল্পনা প্রস্তুত করা আছে। এখন দলকে সংগঠিত করার বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আগামী বছর সুবিধাজনক সময়কে বেছে নিতে পারে সরকার। এ সময়ের আগেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়ে পড়লে বিএনপি আরো চাপে পড়বে। ওই অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হবেন না। আর সিনিয়র নেতারা মামলায় এমনভাবে জর্জরিত যে, তাদের কারো পক্ষে দলকে সংগঠিত রাখা সম্ভব হবে না। গত আড়াই বছরে সহিংসতার অভিযোগে সারাদেশে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে ১৫ হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত পাঁচ মাসে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির এক হাজার ১০০ নেতাকর্মীর নামে শতাধিক আইনে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্যান্য আইনের মামলায় কমপক্ষে সাড়ে ৬০০ চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে।

বিএনপির আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৩, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৭৬, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৭৮, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১০, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ ৮, রফিকুল ইসলাম মিয়া ৫, এমকে আনোয়ার ৫, মির্জা আব্বাস ৭৩, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১১, বিএনপির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ৫, শমসের মবিন চৌধুরীর ৪, সেলিমা রহমান ১০, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ৫, মোসাদ্দেক আলী ফালু ৪, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ৮৭, বরকতউল্লা বুলু ৫০, সালাহউদ্দিন আহমেদ ২৭, রুহুল কবীর রিজভী ৪৪টি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ৪০টি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ১১০, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ১৭৮, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১০০, সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপুর বিরুদ্ধে ১০৫, ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম ৩৮, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে ১০১টি, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় বিচার প্রক্রিয়া যতোই এগোবে ততোই বিএনপি বেকাদায় পড়তে থাকবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।