প্রস্তুতির অভাব২০ দলে

 

স্টাফ রিপোর্টার: আন্দোলনের নির্দেশনা আছে কিন্তু প্রস্তুতি নেই ২০দলীয় জোটে। রমজানের আগে শরিক দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঈদের পর আন্দোলনেযাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তারপর কেটে গেছে দেড়মাস। ইফতার পার্টিগুলোতে সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিকআলোচনাও করেছেন নেতারা। এদিকে শিগগিরই কর্মসূচি প্রকাশের ঘোষণা এসেছে জোটেরপ্রধান শরিক বিএনপির তরফে। বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়াই ঘোষণা দিয়েছেনঈদের পর আন্দোলনে নামবে ২০ দল। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েগতকালও দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আন্দোলনের কর্মসূচি খুব শিগগরিই চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য দলের স্থায়ী কমিটিও ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে।’

কিন্তু আন্দোলনের জন্য এখনও প্রস্তুতনয় শরিক দলগুলো। বেশির ভাগই এখন পর্যন্ত দলীয় ফোরামে নিজেদের অবস্থানচূড়ান্ত করেনি। খোদ বিএনপিতেই সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে সাংগঠনিক পুনর্গঠন।মহানগর বিএনপির পর এখন অঙ্গ ও সহযোগী দলগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেদলটি। শরিক দলগুলোর পরিস্থিতিও একই। সবাই ব্যস্ত সাংগঠনিক পুনর্গঠনে। ২০দলীয় জোটের একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন আন্দোলনের চূড়ান্তপ্রস্তুতি নিয়ে এখনও দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। জোট নেতা খালেদা জিয়ারসুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নেবেন তারা।

সূত্রজানায়, চলতি সপ্তাহেই বিএনপি স্থায়ী কমিটি ও জোটের বৈঠক ডাকতে পারেনখালেদা জিয়া। বুধবার দলের স্থায়ী কমিটি ও বৃহস্পতিবার জোটের বৈঠক ডাকারসম্ভাবনা রয়েছে। সে বৈঠকেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র আরও জানায়, আন্দোলনের একটি পর্যায়ের প্রস্তুতি এখন চলবে, পরে পরিস্থিতি অনুযায়ীকর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফনেজামী বলেন, রমজানের আগে জোটের বৈঠকে ঈদের পর আন্দোলনে যাওয়ার নীতিগতসিদ্ধান্ত হয়েছিলো। সে সিদ্ধান্তের আলোকেই জোট নেতা খালেদা জিয়া আন্দোলনেরঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে দিন-তারিখ নির্ধারণ করেকর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়নি। জোট নেতা খালেদা জিয়ার ঘোষণার জন্য সবাই অপেক্ষাকরছেন। তিনি কর্মসূচি ঘোষণা দিলে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি শরিক দলইসাধ্যমতো শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। আন্দোলনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রস্তুতিরব্যাপারে মাওলানা নেজামী বলেন, রমজানে সবাই ব্যস্ত দিন কাটিয়েছে। ঈদের পরএখন সবার নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নেবে। আমরাও শিগগিরই এ ব্যাপারেনিজেদের মধ্যে বৈঠক করবো। তবে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথাবলেছে জামায়াত। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সম্মানে জামায়াতেরইফতারে দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, সর্বাত্মকআন্দোলনে নামবে জামায়াত। জীবনের বিনিময়ে হলেও গণমানুষের দাবি নির্দলীয়তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে নেতাকর্মীরা। কল্যাণ পার্টিরচেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, রমজানেরআগে সাম্যবাদী দলের একাংশ যোগ দেয়ার মাধ্যমে ১৯ দলীয় জোট ২০ দলীয় জোটেপরিণত হয়। সেদিন জোটের একটি বৈঠক হয়েছিলো। সে বৈঠকে ঈদের পর আন্দোলনেরনীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেতা খালেদা জিয়ার সেসিদ্ধান্তের আলোকে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। জোটের শরিক দলের মধ্যে ফলোআপআলোচনা নিয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসে আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠক হয়নি। তবে ইফতারমাহফিলগুলোতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে বিস্তর। সেখানে জোট নেতা খালেদাজিয়া সবার মতামত নেয়ার চেষ্টা করেছেন, কথা শুনেছেন। সে হিসেবে জোটের শরিকদলগুলো সবসময় আলাপ-আলোচনার মধ্যেই আছে।

জেনারেল ইবরাহিম বলেন, শিগগির জোটেরআনুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকার কথা শুনেছি। সে বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। নিজ দল কল্যাণপার্টির আন্দোলন প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত তিন মাস সময় আমরানানাভাবে কাজে লাগিয়েছি। আমাদের দলের সাবেক মহাসচিব আন্দোলনবিমুখ ছিলেন, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে দল থেকে অব্যাহতিদেয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত ও কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতেসম্মেলনের মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হয়েছে ঢাকা মহানগর কমিটি। ঢাকা মহানগরেরপ্রতিটি থানা, যুব ও ছাত্র কল্যাণ পার্টির পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগামীআন্দোলনে নিজ দলের সার্বিক অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যতটুকুইআমাদের মাধ্যমে সম্ভব তার সর্বোচ্চ যেন আমরা আনন্দের সঙ্গে দিতে পারি সেপ্রস্তুতি নিয়েছি। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জেনারেল ইবরাহিম বলেন, আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে চাই। সরকার যে আন্দোলনে বাধা দিলেবিরোধী দলকেও তা অতিক্রমের  প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য সাংগঠনিক ও জনবলেরপ্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ মহামতি যিশু খ্রিষ্টের মতো এক গালে চড় খেলে অন্যগালটি বাড়িয়ে দিলে আন্দোলন ঝাঁকি খাবে, সফল হবে না। জোটের শরিক দল খেলাফতমজলিশের মহাসচিব প্রফেসর আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঈদের পর আন্দোলনেরব্যাপারে রমজানের আগে জোটের বৈঠক সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। তারপর এ ব্যাপারে নতুনকোন আলোচনা হয়নি। রমজানের ব্যস্ততা শেষে এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েআলোচনা হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদওয়াক্কাস বলেন, আন্দোলন শুরু হলে জোটের অন্য শরিক দলের মতো আমরাও সার্বিকপ্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে নামবো। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের সব সময় আন্দোলনেরপ্রস্তুতি রয়েছে। লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, গতকয়েক মাস আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক পুনর্গঠনকেই জোরদিয়েছি। আমরা আন্দোলনের একটি ক্ষেত্র তৈরি করছি। আগামী সপ্তাহে জোটের একটিবৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে বৈঠকে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। তিনিবলেন, সরকার পতনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই আমরা মাঠেনামবো। প্রতিটি শরিক দলই এবার সর্বোচ্চ অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডা.ইরান বলেন, রাজধানীতে আমাদের কিছুটা দুর্বলতা ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠতে আমাদেরজোটের প্রধান দল বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের কমিটি পুনর্গঠন করেছে। সব মিলিয়েআমরা ইতিবাচক অবস্থানেই আছি।