প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতায় মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি : অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে ব্যর্থতার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন সরকারের শরিক জাতীয় পাটির সাবেক এ মহাসচিব। এদিকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা এবং তদন্ত কমিটির কাজ শুরুর মধ্যেই ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র ২৪ মিনিট আগে এবং শনিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয় পরীক্ষার ৪৫ মিনিট আগে। এসব প্রশ্ন বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সোস্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন।
পরীক্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিটি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। নানা উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন ফাঁসে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, দেশের ভিআইপি, ভিভিআইপিদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাস দিলে মুহুর্তের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। অথচ পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ থেকে এ বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নম্বরও দেয়া হচ্ছে। এ নম্বরে চাহিদামতো টাকা পাঠালে পুরো প্রশ্নপত্র তাদের দেয়া হয়। তবে এভাবে ঘোষণা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরতে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে কেন? অভিভাবকরা বলছেন, যদি এভাবে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ না করা যায় তাহলে পরীক্ষা আয়োজন করে কী লাভ। তারা আরও বলছেন, প্রশ্ন ফাঁস হলে তা হয়তো ১ থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে। তারা ভালো পরীক্ষা দেয়। আর যারা সারা বছরে লেখাপড়া করেও তাদের চেয়ে ভালো করতে পারে না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে এখন শুধু ফেসবুকে প্রশ্ন খোঁজা হচ্ছে।
গতকাল এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে সোমবার সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ফাঁস করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ইংরেজি প্রথম পত্রের ক সেটের প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের ঊহমষরংয ১ংঃ ঢ়ধৎঃ ২০১৮ নামের একটি গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নটি ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ওই প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস একটি আলোচিত বিষয়। অথচ শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। বরং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের খবর প্রকাশ হলে মন্ত্রণালয় থেকে এটি অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দিতো। তবে এবার প্রশ্নফাঁসের জন্য প্রথমবার ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে পরীক্ষা বাতিল হবে কি বা না।