প্রশ্ন ফাঁস :কাউকে শনাক্ত করেনি তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের তদন্ত কমিটি কাউকে সনাক্ত করতেপারেনি। শুধু সুপারিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে তদন্ত কমিটি। আর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত তদন্তকমিটি এখনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। চলতি সপ্তাহে রিপোর্ট মন্ত্রীর কাছেজমা দেয়া হবে বলে কমিটির প্রধান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট করে কাউকে শনাক্ত না করার কারণে প্রশ্নফাঁসে জড়িত শক্তিশালীচক্র ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাবে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটিও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত নির্দিষ্ট কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।যদিও কমিটি একাধিকবার তদন্তের সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন, বিভিন্নস্থানও পরিদর্শনকরেছেন।

কমিটির একটি সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে নাপারার অন্যতম কারণ হচ্ছে সবার সহযোগিতা না পাওয়া। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা আশানুরূপ পাননি। এতে প্রশ্ন ফাঁসের মতোঅপরাধের অপরাধীও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।প্রশ্নপত্রসহ সরকারিসকল ছাপার কাজ সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) থেকে করা হয়। এপ্রতিষ্ঠান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে। গত বছরপ্রশ্নপত্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তবে এরপরও প্রশ্ন ফাঁসবন্ধ করা যায়নি। এ কারণে বেশিরভাগেরই সন্দেহের তীর এ প্রতিষ্ঠানটির দিকে।তবে প্রশ্নপত্র শুধু বিজি প্রেস থেকেই ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, অন্যান্যজায়গা থেকেও হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনো প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ওমডারেশন যারা করেন তাদের মধ্য থেকেও তা হতে পারে। এছাড়া ঢাকার বাইরেবিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ট্রেজারিতে প্রশ্নপত্র রাখা হয়। যেখানে ট্রেজারিনেই সেখানে ব্যাংকের ভল্টে, আবার কোথাও সংশ্লিষ্ট থানায় প্রশ্নপত্রসংরক্ষণ করা হয়। প্রশ্নফাঁসের উত্স খুঁজে বের করতে এ বিষয়গুলোও তদন্তকমিটিকে নজরে আনা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

গত ১০ এপ্রিলঅনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওইঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটির পাশাপাশিঢাকা শিক্ষা বোর্ড একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।পাঁচ সদস্যবিশিষ্টএ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব আবদুস সালামহাওলাদারকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকশ্রীকান্ত কুমার চন্দ, বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. মঞ্জুরুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (হিসাব) ফজলেএলাহী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেইনের নেতৃত্বে গঠিতকমিটির সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে দুজনযুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ), শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরযুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ) ওঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক (বিদ্যালয়)।

২০১৩ সালের জুনিয়র স্কুলসার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিলো। ওইসময় বিভিন্নজাতীয় দৈনিকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। এরপর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডএকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। যদিও তদন্ত করে ঢাকা বোর্ড প্রমাণ পায়নি বলেজানিয়েছিলো। এর আগে গত ১১ জুন প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর শাস্তির বিধানরেখে আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেন শিক্ষাবিদরা। একইসাথে শিক্ষাবিদরাপ্রশ্নফাঁস রোধে প্রযুক্তি ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়ে বলেন, গতানুগতিকপদ্ধতিতে প্রশ্ন নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারবাড়াতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ বিষয়েও মত দেনশিক্ষাবিদরা।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম শ্রেণিরশিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার দুটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণমিললেও ওইসব পরীক্ষা বাতিল হয়নি। ওই পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের ৫৩ শতাংশ এবংইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরতদন্তে প্রমাণ মেলে। প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েছিলেন অনেক অভিভাবক। গণিত ও ইংরেজিদ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রের সাথে অভিভাবকদের হাতে থাকা প্রশ্নের মিল পানতারা। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার গণিতের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন দামে দেশের বিভিন্ন স্থানেবিক্রি হয়েছিলো প্রশ্ন। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রশ্নের হুবহু কপিও প্রকাশ করাহয়। পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছিলো ওই প্রশ্ন।

এবারেরএইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন গত ২ এপ্রিল রাতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগেব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজন, শেরপুরে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৯ এপ্রিল রাতেহঠাত করেই পরীক্ষা স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওইদিন সারাদিনবিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মোবাইলফোনেরএসএমএস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বোর্ড বিষয়টিজানতে পেরে মূল প্রশ্নপত্রের সাথে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র মিলিয়েপ্রাথমিকভাবে এর সত্যতা খুঁজে পায়। এ কারণে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষাটিস্থগিত করা হয়।