প্রশাসনের আশ্বাসে ঝিনাইদহে হরতাল প্রত্যাহার : নিরসন হয়নি শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহে অনির্দিষ্টকালের হরতাল প্রত্যাহার করেছে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও জেলা দোকানমালিক সমিতি। যান চলাচলসহ জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল গফফার বিশ্বাস হত্যা মামলায় ঝিনাইদহ পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টুসহ ১৮ শ্রমিক নেতার নামে হত্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডাকে সংগঠন দুটি। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সাথে প্রশাসনের সমঝোতা হওয়ায় এ হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। বৈঠকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ বাস মালিক এবং শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গফফার হত্যা মামলায় কাউকে হয়রানি না করে প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া হরতালে খুলনা-কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরণের সড়ক যোগাযোগ অচল হয়ে পড়ে। জেলা শহরে ইজিবাইক চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। হরতাল চলাকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি ইজিবাইক ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। গত সোমবার শ্রমিক নেতা আব্দুল গফফার বিশ্বাসকে হত্যার প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘট ও গত মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা পালন করে জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভার সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকালবুধবার সকাল থেকে কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কমর্চারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করে। তারা নগর ভবনের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। মেয়রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হান্নান। পরিছন্ন কর্মীরা কাজ থেকে বিরত রয়েছে। নগর জীবনে চরম র্দুভোগ দেখা দিয়েছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এ ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা কেউ গফফার হত্যার সাথে জড়িত নয়। আসল খুনিদের আড়াল করতে রহস্য উদঘাটন না করে এ ধরনের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও জেলা দোকানমালিক সমিতি যৌথভাবে গত মঙ্গলবার রাতে এ হরতালের ডাক দেয়। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীরা পৃথক ভাবে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। হরতাল চলাকালে সকাল থেকে জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে বাস-ট্রাক দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। জেলা শহরের অধিকাংশ দোকান বিপনী বিতান বন্ধ থাকে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ওলিয়ার রহমান খান, বাদশা ড্রাইভার ও হাফিজুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে শ্রমিকদের চাপে ওলিয়ারকে ছেড়ে দিলেও বাদশা ও হাফিজুরকে আটক করে রাখা হয়েছে। গত সোমবার ভোররাতে শহরের উকিলপাড়া মোড়ে জেলা-বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল গফফার বিশ্বাসকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই রেজাউল বিশ্বাস বাদী হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদর পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ ১৮ জন শ্রমিক নেতাকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু, শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান রিজু, বল সাইদ, ব্যানা, ওলিয়ার রহমান খান, বজলুর রহমান, মহব্বত, সুমন ওরফে মফিজ, নিকারী ছাইফুল, মাছ সাইদ, কুড়াল বাবলু, লম্বা বাবলু, কাঙ্গালী হয়দার, হাতি মনিরুল, আজিজ মণ্ডল, আব্দুল মালেক ও রাশেদসহ অজ্ঞাতরা।

বাস টার্মিনালে কাউন্টার ও দোকান নির্মাণে ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফফার বিশ্বাসকে উল্লেখিত আসামিরা হত্যা করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে জেলা শহর অচল হয়ে পড়ে। মহাসড়কগুলোতে শ শ যানবাহন আটকা পড়ে। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দীন জানান, গফফার হত্যা মামলার তদন্ত ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।