প্রবাহমান দাবদাহে তপ্ত চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ প্রায় পুরো দেশ : থাকবে আরও কয়েক দিন

 

স্টাফ রিপোর্টার: জ্যৈষ্ঠের তাপদাহে জনজীবনে যখন হাসফাঁস অবস্থা, তখন বিদ্যুতের লোড শেডিং তা অসহনীয় করে তুলেছে। এই সপ্তাহে গরম কমার কোনো আভাস না পাওয়ার মধ্যে বিদ্যুতকর্তারাও জানিয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কারণে বন্ধ অন্তত ১০টি বিদ্যুতকেন্দ্র, পরিস্থিতির উন্নতিতে আরও তিন-চার দিন লাগবে। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই কয়েক দিন ধরে চলছে লোড শেডিং। এই অবস্থায় সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিদ্যুত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

ঝড়ে খুঁটি ভেঙে যাওয়া, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০টি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং উৎপাদনের কাঁচামাল গ্যাসের স্বল্পতাকে এর কারণ দেখিয়েছেন তিনি। তিন-চার দিন সময় চেয়ে নসরুল বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চার দিনের ভিতর উৎপাদনে আসবে। রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’ রোববার বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৯ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। বিপরীতে দিনের বেলা সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিলো ৭ হাজার ২২০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ৮ হাজার ৪৮৩ মেগাওয়াট।

বিদ্যুত বিভাগের জনসংযোগ শাখার পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিবিয়ানা, ৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মেঘনাঘাট, আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়েকটি ইউনিট, ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিরাজগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ‘ফলে অধিক চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের উৎপাদনে বেশ খানিকটা কমে গেছে।’ এই সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রমজানে অধিক লোডের কারণে বিদ্যুত কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি যাতে না দেখা দেয়, সেই জন্যই এখন করা হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে পরশুর চেয়ে গতকাল সোমবার রাতে বিদ্যুত পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও আবহাওয়া রয়েছে অপরিবর্তিত অবস্থায়। ফলে জনদুর্ভোগের মাত্রা খুব একটা হ্রাস পায়নি। ভ্যাপসা গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতপরশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে গতকাল সোমবার মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গা তিতদহ হুলিয়ামারি পাড়ার মউিদ্দীন। তিনি চুয়াডাঙ্গা বেলগাছিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। গতকালই বেলগাছি কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গরজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গায় হিস্যামতো মান সম্পন্ন বিদ্যুত সরবরাহের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেছে দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। তাতে বলা হয়, হিস্যা মতো বিদ্যুত সরবরাহ করা না হলে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকালও যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় ছিলো সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮ ও সর্বনিন্ম ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। মেহেরপুর ও ঝিনাইদহেও ব্যরোমিটারের পারদ প্রায় একই পর্যায়ে ছিলো। সকালে বাতাসের আদ্রোতা ৯০ এর ওপর থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। জনজীবনে অস্বস্তির মাত্রাও বাড়ছে প্রায় সমানতালে। বিদ্যুত পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিতে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিদ্যুত গ্রাহকসাধারণ বিষিয়ে উঠেছে। ক্ষোভে বারুদের মতো ফুসছে। গতকাল দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিঙ থাকলেও রাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও তা কতক্ষণ স্থায়ী তা স্বয়ং বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রে নিয়োজিতরাও বলতে পারেননি। বরাদ্দ কিছুটা বেশি পাওয়া গেছে বলেই রাতে লোডশেডিঙের বিড়ম্বনায় গ্রাহক সাধারণকে পড়তে হয়নি বলে জানানো হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আসাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমন ও সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি গতকাল পেশ করে চুয়াডাঙ্গায় হিস্যা অনুপাতে বিদ্যুত সরবরাহের দাবি জানানোর পাশাপাশি লো ও উচ্চ ভোল্টের সমস্যা দ্রুত নিরসনেরও অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, অন্যথায় আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার সংশ্লিষ্ঠ বিভাগকেই নিতে হবে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার নাগদ আবহাওয়া অনেকটা অপরিবর্তিতই থাকছে। এর মাঝে বৃষ্টি হলেও স্থানীয়ভাবে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ফিরবে অস্বস্তিকর পরিবেশ। এ গরমে সুস্থ থাকতে বেশি বেশি পানি পান ও রসালো ফল খাওয়াসহ বেশি বেশি ছায়ায় অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সচেতনেরা।