প্রথম রাজধানীর স্বীকৃতির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন

 

দাবিনামা পেশ : চলমান আন্দোলনে শামিল ওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম রাজধানীর স্বীকৃতির দাবিতে গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রথম রাজধানী বাস্তবায়ন পরিষদ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল ৯টায় বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকা ও  মুক্তিযুদ্ধ সংসদের পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। উদ্বোধন করেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু। পতাকা উত্তোলনের পর  মানববন্ধন কর্মসূচি এবং মানববন্ধন শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অনুষ্ঠান স্থলে এসে শেষ হয়। ফেস্টুনসহ বেলুন ওড়ানো হয়।

মুক্তমঞ্চে বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ওয়ালিউর রহমান মালিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার আবু হোসেন, সাবেক জেলা কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক, সদর উপজেলা কমান্ডার আশু বাঙালী,  জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা তৌহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসদ সেক্রেটারি অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন, শ্রমিকলীগ নেতা আফজালুল হক, জাতীয় পাটির নেতা শাহবুদ্দিন বাবু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুন্সী জাহাঙ্গীর আলম মান্নান, উদীচী ও বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হান, সিডিএফ’র সেক্রেটারি বিল্লাল হোসেন প্রমুখ।

কর্মসূচিতে মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল তারিখে চুয়াডাঙ্গায় অস্থায়ী সরকারের শপথ  গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। সকল আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর পাকবাহিনী উপুর্যপরি আক্রমণ শুরু করলে পরে তা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় স্থানান্তর করা হয়। চরম এই সত্যকে স্বীকৃতি দিতে হবে, স্বীকৃতি আদায় করেই ছাড়তে হবে।

সন্ধ্যায় কলেজ শহীদ মিনার শুরু হয় ‘আমার স্মৃতিতে ২৬ মার্চ-১৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা।’ প্রস্তাবনার ওপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক এমএ মুহিত। স্মৃতি চারণ করেন- অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, নিমাইপদ সিংহরায়, অ্যাড. শহীদুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম মালিক এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ওয়ালিউর রহমান মালিক। পরে কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করে অরিন্দম ও উদীচী কর্মীরা। সারাদিনের অনুষ্ঠানমালা পরিচালনা করেন হাবিবি জহির রায়হান, আব্দুস সালাম ও শাহেদ হাসান।

পেশকৃত দাবি নামায় বলায় হয়, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বিপ্লবী সরকার ‘চুয়াডাঙ্গা অস্থায়ী রাজধানী’ ঘোষণা করা হয়েছিলো অবিলম্বে তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রধান করে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের মানুষের প্রাণের দাবি কার্যকর করতে হবে। রাজধানীর ভূমিকা পালন করতে যে চুয়াডাঙ্গাবাসী ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ সুগম করা হোক।  চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানীর স্মৃতিবহনকারী ঐতিহাসিক স্থান ও ভবনগুলো সংরক্ষণ, বিশেষ করে মতিলাল আগারওয়ালা দ্বিতল বাড়ি, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন হল, শ্রীমন্ত টাউন হল প্রভৃতি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরসহ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।

১৯৭১ সালের ৩-৭ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহর ও আশপাশে লাগাতার বোমাবর্ষণ এবং ১৬ এপ্রিল সরোজগঞ্জ ও ডিঙ্গেদহ বাজারে পাক বাহিনী নির্বিচারে গুলি ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছিলো সে সব স্থানগুলো চিহ্নিত করে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষণ, শহীদদের স্মরণে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।  রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি কতোটুকু আছে বা নেই সেই বিতর্কে না যেতে ঐতিহাসিক সত্যতার আলোকে প্রতিবছর স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে ১০ এপ্রিল উদযাপন করা হোক। প্রথম রাজধানী দিবস পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা তুলে ধরে জাতিকে দায়মুক্ত করা হোক।

‘চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী’ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন দাবিতে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর প্রতি সমাবেশ থেকে ঔদ্ধাত্য আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আসুন আমরা জেলা-উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ‘চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী- স্বীকৃতি চাই’ দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড স্থাপন করি এবং স্থানীয় পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করি। ১৪ এপ্রিল জেলার সকল প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ১লা বোশেখের অনুষ্ঠানে ‘চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী স্বীকৃতি চাই’ স্লোগানটি ব্যানারে ব্যবহার করুন।

১৬ এপ্রিল ১৯৭১ শুক্রবার সরোজগঞ্জ ও ডিঙ্গেদহ বাজারে পাকবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা বিরোধী সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা ও হানাদারদের ঘৃণা প্রদর্শন করুন। ২৬ মার্চ – ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের চুয়াডাঙ্গা শহরের পাশাপাশি আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর, দর্শনাসহ শহরের সংঘঠিত ঘটনা বিশেষভাবে চিহ্নিতকরণ, প্রকাশনা করে চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানীর ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরুন। ১৭ এপ্রিল ‘মুজিবনগর দিবস’র কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী জাতীয় নেতৃত্ব ও মিডিয়ার সামনে ‘চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী স্বীকৃতি চাই’ দাবিতে ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করুন, লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হবে। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ‘চুয়াডাঙ্গা টু মুজিবনগর’ আয়োজন করুন।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া বন্ধু কল্যাণ সংগঠনের উদ্যোগে ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী দিবস স্বীকৃতির দাবিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টায় বন্ধু কল্যাণ সংগঠনের অস্থায়ী কার্যলয়ের সামনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন টাইম টিভির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন শান্ত’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল হাফিজ। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহাসীন আলী খান, বাজার কমিটির সভাপতি মির্জ্জা হাকিবুর রহমান লিটন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান ও কৃষক মোল্লা আলতাব হোসেন ফেলা। অন্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাজি আব্দুর রহমান, হাজি আনোয়ার হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান ও শেখ জিহাদি ইসলাম সোহাগ প্রমুখ। আলোচনাসভার আগে প্রধান প্রধান সড়কে বর্ণাঢ্য র‌্যালি প্রদক্ষিণ করে। সভা শেষে বন্ধু কল্যাণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রথম রাজধানী দিবস স্বীকৃতির দাবিতে প্রধান অতিথি মহোদয়কে স্বারকলিপি প্রদান করেন।