প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট ২২ মার্চ

 

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা : ধাপে ইউনিয়নের পরিষদের নির্বাচন 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২২ মার্চ থেকে সারাদেশে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শুরু হচ্ছে। প্রথমবার দলীয় ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে হবে নির্দলীয় ভোট। মোট ৬ ধাপে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউপি নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন গতকাল বৃহস্পতিবার এই ৬টি ধাপের ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করে স্থানীয়ভাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিয়েছে। তবে প্রথমধাপে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের কোনো ইউনিয়ন পরিষদ থাকছে না।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউপির ভোট হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি। আপিল দাখিল ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২ মার্চ। ৩ মার্চ বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে এই তারিখ ঠিক করা হয়েছে। সব ধাপের তফসিলের তারিখ কমিশন ঠিক করেছে। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে এগুলো ঘোষণা করা হবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ভোটে অনিয়ম হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোনো ধরনের গাফিলতি হলে ছাড় দেবো না।

দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মার্চ, মনোনয়ন দাখিল করা যাবে ২ মার্চ পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপে ৭১১টি ইউপিতে ভোট ২৩ এপ্রিল, মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২৭ মার্চ। ৭ মে চতুর্থ ধাপের ৭২৮টি ইউপিতে ভোট, মনোনয়ন জমা দেয়া যাবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি ইউপির ভোট, মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২ মে। এছাড়া ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৬৬০টি ইউপির ভোট, মনোনয়ন জমার শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ মে। গতকাল কমিশন সভায় ৬টি ধাপের নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষা, পূজা ও ৬ জুন থেকে শুরু হওয়া রোজাকে মাথায় রেখে এ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। ইসির নির্দেশ মোতাবেক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের এলাকার ইউপি নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি নির্ধারণ করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করবেন।

ইউপি নির্বাচনে মাঠ পর্যায় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, সমবায় কর্মকর্তা, পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা, পশুসম্পদ কর্মকর্তা, মত্স্য কর্মকর্তা, প্রকৌশলী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্র বিশেষ সাব-রেজিস্ট্রার ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনে থাকলেও কোনো সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ জরিমানা ও দণ্ড দিতে পারবেন মাঠে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে না কমিশন। যদিও গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবার দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী বাতিলের ক্ষমতা ছিলো ইসির। কিন্তু এবার ইউপিতে ওই ক্ষমতা দেয়নি আইন মন্ত্রণালয়। এ নির্বাচনের জন্য ৬শ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ২৫০ কোটি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সংশোধিত নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি গত বুধবার গেজেট আকারে জারি করা হয়েছে। এবার মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামা ও টিআইএন নম্বর দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। বিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের নির্ধারিত জামানত দিতে হবে। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। কোনো মন্ত্রী-এমপি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা সরকারি সুবিধা ছাড়া প্রচারণা চালাতে পারবেন।

যেভাবে দেয়া যাবে দলীয় মনোনয়ন: ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিবন্ধিত ৪০টি দল প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেয়া লাগবে না। তবে রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন থাকতে হবে যে, উক্ত প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবী, নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি পত্র তফসিল ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করবে এবং উক্ত পত্রের একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করবে। কোনো দল ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করতে পারবে না। রাজনৈতিক দল কর্তৃক একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে উক্ত দলের সকল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে। পৌরসভার মতো একইভাবে ইউপিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া যাবে।

তফসিল নিয়ে সমন্বয়হীনতা: ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে শুরুতেই ইসিতে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। প্রথমে বলা হয়, ৬ থেকে ৭ ধাপে, পরে ১০ থেকে ১২ ধাপে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউপির তফসিল ঘোষণা করতে চেয়েও পরে করেননি। শুধু তা-ই নয়, ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর জাতীয় সমাবেশে যোগ দিতে গাজীপুরের সফিপুরে অবস্থান করেন। এর মধ্যেই ছয় ধাপের ভোটের দিন চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল ইউপির তফসিল ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেয়া হলেও কমিশনের কোনো কর্মকর্তা তা বলতে পারেননি। বিকেলে ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে ইউপির প্রথম ধাপের ভোটের সময়সূচি জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

এর আগে দেশে সব মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে ৮ বার। সর্বশেষ ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রথম ধাপে প্রায় ছয়শ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার ৮শর বেশি ইউপিতে নির্বাচন করা হয়। ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে থেকে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউপির নির্বাচন আয়োজনে তফসিল চূড়ান্ত করে কমিশন। বাকিগুলো পর্যায়ক্র

মে করা হবে। দশম সংসদ, উপজেলা, সিটি ও পৌর নির্বাচনের পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি এবার ইউপি ভোট করছে।