প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজাসহ গ্রেফতার ২

স্টাফ রিপোর্টার: ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনসারুল্লাহর দু সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। তারা হলো- সাদ আল নাহিয়ান ও মাসুদ রানা। নাহিয়ান ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন হত্যাচেষ্টার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সে আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে মিরপুর থেকে নিলয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আবারও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত নাহিয়ান শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর ভাতিজা। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম চুন্নু। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএ’র শিক্ষার্থী। এছাড়া আনসারুল্লাহর অপর সদস্য মাসুদ রানাকে গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডে হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া আরিফুল ইসলামের খালাতো ভাই ও বোন জামাই। নিলয় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের  অতিরিক্ত উপকমিশনার নুরুন্নবি জানান, গতকাল সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর জামিন পাওয়া ও পলাতক আনসারুল্লাহ সদস্যদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করছে পুলিশ। এরই মধ্যে জামিন পাওয়া কয়েকজন সদস্যকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহর কোন স্লিপার সেলটি নিলয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তা তারা জানার চেষ্টা করছেন। এছাড়া গত দু বছর ধরে পলাতক কয়েকজন আনসারুল্লাহ সদস্যকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে রেজওয়ানুল আজাদ রানা, নবীর হোসেন ওরফে নবীন ও আবদুল করিম ওরফে জাবের অন্যতম। ইতিপূর্বে একাধিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রানা, জাবের ও নবীরের পরিকল্পনায় সংগঠিত হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সন্দেহভাজনদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কোনো একটি স্লিপার সেলের সদস্যরাই নিলয়কে হত্যা করেছে। ওই স্লিপার সেলের সদস্যদের শনাক্ত করতেই পুলিশি তৎপরতা চলছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিলয় হত্যাকাণ্ডের আগে রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা ও ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নির্দেশদাতা নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি বলে তারা জানতে পেরেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ভিন্ন ভিন্ন স্লিপার সেল অংশ নেয়। এ কারণে এক স্লিপার সেলের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও অন্য স্লিপার সেলের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায় না। গোয়েন্দা পুলিশ আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে যারা আক্রমণ চালিয়েছিল তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা সাদ আল নাহিয়ান, কামাল হোসেন সর্দার, কাওছার হোসেন ও কামাল উদ্দিনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। নাহিয়ান বাদে অন্যদের মধ্যে কামাল আগে হকারি ব্যবসার সাথে জড়িত, কামাল হোসেন সর্দার কাঠমিস্ত্রী ও আরেক কামাল আগে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, আগের বার তারা জাবের ও রানার নির্দেশে আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যা চেষ্টা করেছিলো। ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সাদ আল নাহিয়ান প্রথমে জামিনে বেরিয়ে আসে। এর কিছুদিন পর জামিনে বের হয় অন্যরা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জামিনে বেরিয়ে আসার পর তারা আবার আনসারুল্লাহর কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে তাদের কাছ থেকে নিলয় হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত স্লিপার সেল সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা স্বীকার করা হয়নি।

এদিকে জামিনে বেরিয়ে আসা ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের মধ্যে তামিম আল আদনানী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বাংলাদেশের মূল সমন্বয়কারী, রেজওয়ানুল আজাদ রানা অপারেশন শাখার প্রধান। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ। এছাড়া অন্যদের মধ্যে মাসুল জাফর, মেহেদী, মুসা, সাইফুল্লাহ, আবদুল্লাহ, জাবের, আবু নায়না, আবদুল করিম উল্লেখযোগ্য।

নাহিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিবির চার অতিরিক্ত উপকমিশনার আসামিদের ধরতে কাজ করছেন। এদের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসামিদের ধরার চেষ্টা করছেন। জামিনে বেরিয়ে আসা ও পলাতক আনসারুল্লাহ সদস্যদের ধরতে তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে কয়েকজনের অবস্থান শনাক্ত করেছেন। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাজধানীর পূর্ব গোড়ানের ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নীলদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নিল। ওই দিন রাতেই তার স্ত্রী আশামণি অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ব্লগে ধর্ম নিয়ে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থি দলের সদস্যরা নিলয়কে খুন করেছে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন।