প্রতিবেশীদের কটুক্তি আর স্ত্রীর অবিশ্বাসে রবজেলের আত্মঘাতী

সরোজগঞ্জ কাঁচাবাজারের ছাউনিতে আনাড়ি হাতুড়ে ডাক্তারের ওয়াশে সর্বনাশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাঁচতে পারলো না খেটে খাওয়া রবজেল আলী (৪০)। এক বিধবাকে নিয়ে প্রতিবেশীদের ক’দিন ধরে কটুক্তি আর স্ত্রীর অবিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রবজেলকে আত্মঘাতী করেছে। রবজেলের মৃত্যুতে পিতাহারা হলো তিন শিশুসন্তান। বিধবা হলেন ভুল বুঝে স্বামীকে অভিমানি করে তোলা কুলসুম (৩৫)। পরিশ্রমী সহকর্মী হারালেন ভুলটিয়া-সরোজগঞ্জ এলাকার কুলিদল।

স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেছে, আত্মহত্যার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দানাদার বিষ খায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার বদলে সরোজগঞ্জের হাতুড়ে মাসুদুল হক মাসুদকে দিয়ে পাকস্থলি পরিষ্কারের নামে অনিবার্য করে তোলা হয় মৃত্যু। শেষ পর্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, আনাড়ি হাতে ওয়াশের কারণে লিভারে পানি জমেছে বলেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হলো না।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ভুলটিয়ার মৃত মোতালেব মুন্সির মেয়ে কুলসুমের সাথে বিয়ে করে ঘরজমাই হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন কুষ্টিয়া লক্ষ্মীনদিয়া গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে রবজেল। পরের জমিতে জীর্ণকুঠিরে স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন রবজেল। এলাকার কুলি (লেবার) দলের সাথে সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে একটু স্বস্তি নিয়েই বিছানায় গা এলাতেন। ক’দিন ধরে সেই স্বস্তি অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। কেন?

স্থানীয়রা বলেছে, বছরখানেক আগে প্রতিবেশী ওলি মারা যায়। তার স্ত্রী নাহার বানু মাঝে মাঝে রবজেলের বাড়িতে আসে। রবজেল বিধবা নাহার বানুকে খালা বলে ডাকলেও প্রতিবেশীদের অনেকেই কানাঘোষা শুরু করে। প্রতিবেশীদের কয়েকজন কটুক্তি করে বলে, বাধিয়ে রেখে লাভ কি? খালার সাথে বিয়ে করে ফেলো। রবজেলের স্ত্রী কুলসুমেরও কানভারী করে কেউ কেউ। এ নিয়ে কুলসুমের সাথে রবজেলের দাম্পত্য কলহ দানা বাধে। রবজেল তার স্ত্রীকে ভুল না বুঝতে অনুরোধও করে। কাজ হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরতেই কুলসুম তার স্বামীর সামনে পুরোনো প্যাঁচাল শুরু করেন। অভিমানী হয়ে ওঠেন রবজেল। দানাদার বিষ নিয়ে ঢোকেন পায়খানায়। সেখানে বসেই খেয়ে নেন দানাদার বিষ। তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় সরোজগঞ্জে। হাতুড়ে মাসুদুল ওরফে মাসুদ সরোজগঞ্জ কাঁচাবাজারের ছাউনিতে নিয়ে প্রায় দু ঘণ্টা ধরে ওয়াশ করতে থাকেন। অবস্থা যখন গুরুতর তখন হাতুড়ে ডাক্তার মাসুদ অপারগতা প্রকাশ করেন। কুলসুম সেখান থেকে রবজেলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা দেখেই চমকে উঠে বলেন, বাঁচানো কঠিন। লিভারে পানি জমে গেছে। আনাড়ি হাতে ওয়াশের কারণেই এমনটি হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রবজেল মারা যান। লাশ নেয়া হয় ভুলটিয়ার উদ্দেশে।

প্রশ্ন ওঠে, রবজেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? ভুল বোঝা সংসার আর আনাড়ি হাতুড়ের ভিড়ে যে সমাজ কাবু, সেই সমাজের কাছে এ প্রশ্নের জবাব কি থাকে?