প্রতারকচক্রের নিয়ন্ত্রণে ঝিনাইদহ সাবরেজিস্ট্রি অফিস: দলিল লেখক সমিতির নামে অর্থ আদায়

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ জেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলো একশ্রেণির প্রতারকচক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা অতিরিক্ত অর্থ আদায়,জাল দলিল,ভুয়া ক্রেতা সেজে জমি বিক্রি করছে। চক্রটির কাছে ক্রেতা-বিক্রেতারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করায় নিন্দা জানিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

অভিযোগ করা হয়েছে,জেলার ৬টি উপজেলাতেই একটি চক্র দলিল লেখক সমিতির সদস্য পরিচয়ে প্রতিদিন বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এরা প্রভাব বিস্তার করতে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়াতে একশ্রেণির মাস্তানকে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে থাকে। সরকারের বিশেষ একটি সংস্থার দেয়া তথ্য মতে,দলিল লেখক সমিতির নাম করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে জমির ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে। এক্ষেত্রে সাধারণ কৃষকরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। সেইসাথে ভূমিদস্যুদের সিন্ডিকেট আমমোক্তার নামার রমরমা ব্যবসার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়,জেলায় ভুয়া মালিক সেজে বাড়ি-ঘর,জমিজমা,সরকারি সম্পদসহ হিন্দু সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক পড়ে গেছে। পুলিশের একটি সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে,চক্রের আন্তঃদেশীয় সদস্যরা হলো ঝিনাইদহ শহরের কথিত কমিউনিস্ট রণজিত দাস ও তার ছেলে বিশ্বজিত দাস,চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মসজিদপাড়ার লিয়াকত হোসেনের ছেলে সালেহীন সোহাগ ওরফে কাজী আবু হাসান,দলিল লেখক সমিতির সদস্য ফিরোজ আহম্মেদ (লাইসেন্স নং- ১৪৯) ও ফরিদ উদ্দিন।

সূত্র মতে,ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের মৃত কাজী আবদুল মান্নানের ছোট ছেলে কাজী আবু হাসান ওরফে হারুন। তিনি এখন ঢাকায় বসবাস করেন। তার নামীয় ৫ শতক জমি ভুয়া মালিক সেজে প্রতারক চক্রের উল্লিখিত সদস্যরা বিক্রি করে দেয়। সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম কাঁচামালের আড়তে কাজ করেন। তিনি ও তার মেয়ে যুথী খাতুন জেলা শহরের ভুটিয়ারগাতি মৌজার ওই ৫ শতক জমি ৮ লাখ টাকা দিয়ে প্রতারকচক্রের কাছ থেকে ক্রয় করে। ১০ এপ্রিল এই জমির ২৯৯০নং কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আবুল বাশার। বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে জড়িতরা মরিয়া হয়ে ওঠে। এনিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ অভিযানে নামে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মসজিদপাড়া থেকে প্রতারকচক্রের আঞ্চলিক প্রধান সালেহীন সোহাগ ওরফে আবু হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, এ ঘটনার পরের দিন প্রতারক সিন্ডিকেটের আরও দু সদস্য ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ফিরোজ আহম্মেদ ও তার অপর সহযোগীকে আটকের পর সদর থানায় এক রাত আটক রাখার পরে ছেড়ে দেয়া হয়। মামলার তদন্তকারী এসআই আনোয়ার হোসেন এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। প্রতারক চক্রটি তহশিল অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের দাখিলা, নামজারি এবং জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে অবিকল নকল দলিলসহ কাগজপত্র সংগ্রহ করে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে জমি বিক্রি করে দেয়। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার নির্ধারিত অংকের ঘুষের টাকা পকেটে ভরেন এবং নিজ ক্ষমতা বলে জাল কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই জমি রেজিস্ট্রি করে দেন।

বিশেষ একটি সূত্র জানায়,জেলা শহরের লোন কোম্পানির কোটি কোটি টাকার অফিস বাড়ি ভুয়া মালিক সেজে কবলা দলিল মূলে প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আবুল বাশার খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন,যেকোনো দলিলের কাগজপত্র জাল হলে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক এবং ক্রেতা-বিক্রেতা দায়ী থাকবেন। ঝিনাইদহ দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অবৈধ কোনো কাজের সমর্থন তারা করেন না। যারা এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার পক্ষে তারা মত দিয়েছেন।