পোকার আক্রমণ ও অজ্ঞাত পঁচন রোগ! মেহেরপুরের আগাম বাঁধাকপি চাষিরা পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত

 

 

মহাসিন আলী: আগাম বাঁধাকপি চাষ করে এ বছর মেহেরপুরের শ শ কৃষক পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। শাদা বেঁশো পোকা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণে বাঁধাকপি ছিদ্র হওয়া এবং অজ্ঞাত রোগে পঁচে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত বছরের আকাশছোঁয়া লাভ তাদের অগ্রিম বাঁধাকপি চাষে উদ্বুব্ধ করলেও এ বছরের ক্ষতি তাদের পরবর্তী বছরগুলোতে বাঁধাকপি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করবে।

আশ্বিন মাস বাঁধাকপি চাষ করার সময়। কিন্তু অধিক লাভের আশায় মেহেরপুর জেলার চাষিরা শ্রাবণ মাসে বাঁধাকপির চাষ করেন এবং আগাম কপি কেটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করে লাভবান হন। বিগত ৮-১০ বছর এভাবে আগাম বাঁধাকপি চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন চাষি। এ বছরও জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে আগাম বাঁধাকপির চাষ করেছেন কৃষক। কিন্তু এ বছর শাদা বেঁশো পোকা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণে বাঁধাকপি ছিদ্র হওয়ায় এবং অজ্ঞাত রোগে বাঁধাকপি পঁচে যাওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

মেহেরপুর শহরের ফৌজদারিপাড়ার কৃষক ডাবলু এ বছর সদর উপজেলার বেলতলাপাড়ার ঝুলাগাড়ির মাঠে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে আগাম বাঁধাকপির চাষ করেন। একইভাবে একই মাঠে বেলতলাপাড়ার রাজু আহমেদ ৪ বিঘা, ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মিজারুল ইসলাম আড়াই বিঘা জমিতে অগ্রিম বাঁধাকপির চাষ করেন। রাজু আহমেদ জানালেন- গত বছর প্রতিবিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে আগাম বাঁধাকপি চাষ করেন এবং প্রতিবিঘা জমির কপি একলাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এ বছরও প্রায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে আগাম বাঁধাকপির চাষ করেন এ জেলার কৃষকরা। কিন্তু অজ্ঞাত রোগে তাদের কপি ক্ষেতেই পঁচে যাচ্ছে। এছাড়া এক প্রকার শাদা রঙের বেঁশো পোকা ও ঘোড়াপোড়া কপি ছিদ্র ছিদ্র করে খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে।

মিজারুল ইসলাম জানালেন- খরচ বাঁচাতে ক্ষেত থেকে বাছাই করে কিছু কপি কাটা চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হচ্ছি। তিনি পাশের কয়েকটি বাঁধাকপির ক্ষেত দেখিয়ে আরো বলেন- ব্যাপক লোকসান জেনে চাষি বাঁধাকপির ক্ষেত পরিত্ত্যক্ত করেছেন। আবার কোনো কোনো চাষি আলু বা অন্য কোনো ফসল চাষ করতে কপির ক্ষেতে চাষ দিয়ে ফেলে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন- সব ধরনের বিষ প্রয়োগ করেও পঁচনের হাত থেকে কপিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- বাঁধাকপি প্রকৃতপক্ষে শীতের ফসল। তারপরও মাটির গুণ ও ভালো লাভ পাওয়ায় মেহেরপুর জেলাসহ এ অঞ্চলের কয়েকটি জেলার চাষিরা আগাম বাঁধাকপির চাষ করেন। এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ছত্রাক জাতীয় রোগে বাঁধাকপি পঁচে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণ ও পঁচন রোগ থেকে কপি বাঁচাতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি আরো বলেন- প্রথম দিকে যারা কপি কেটে বিক্রি করেছেন তারা এবারও লাভবান হয়েছেন।