পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া দুই শিবির নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

ঝিনাইদহে পাঁচ দিনেও খোঁজ মেলেনি কলেজছাত্র ঈশ্বররা গ্রামের সোহানুরের : পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা শিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারী ও কেসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শিবিরনেতা শামীমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রায় একমাস পর তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেলো। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে যশোরের হৈবতপুর মৌজার বিরামপুর শ্মশান থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে যশোর কতোয়ালি থানার পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নিহত আবুজর গিফারীর চাচাতো ভাই পাননু মিয়া ও শামীমের ভাই তাজনিম হুসাইন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দুটি আবুজর ও শামীমের বলে শনাক্ত করেন।

পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার চাপালী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারিকে (২২) গত ১৮ মার্চ জুম্মার পড়ে বাড়ি ফেরার সময় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ সন্তানের উদ্ধারের দাবিতে আবুজরের বাবা সেলুনকর্মী নুর ইসলাম গত ২৪ মার্চ ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তার ছেলেকে নিয়ে গেছে। ২৫ দিন পর তার গুলিবিদ্ধ লাশ পায় যায়। এদিকে ২৪ মার্চ বিকেলে একই উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্সের ছাত্র শিবির নেতা শামীম হোসেনকে (২০) একইভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯ দিন পর তার লাশও আবুজর গিফারীর সাথে পাওয়া যায়। এ নিয়ে শিবির ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন এবং বিবৃতির মাধ্যমে দুই নেতার সন্ধান দাবি করা হলেও বিষয়টি পুলিশ আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছিলো ছাত্রশিবির। গণমাধ্যমে পাঠানো ছাত্রশিবির ও নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক বিবৃতির মাধ্যমে দুজনের জীবন নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছিলো। অবশেষে যশোরে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। যশোর কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন দুই যুবকের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মৃতদেহ দুটি উদ্ধারের পর যশোর মর্গে এসে নিহতদের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন। তিনি আরো জানান, নিহতরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে পুলিশ পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, আমি শুনেছি কালীগঞ্জ থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই যুবকের লাশ যশোরে পাওয়া গেছে। তিনি আরো জানান, আমার থানার কোনো পুলিশ এ ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত ছিলো না।

এদিকে নিখোঁজের পর দুই কলেজ ছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর উপজেলার ঈশ্বররা গ্রামের মহসিন আলীর পরিবারের লোকজন দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর শঙ্কার মধ্যে। ১০ এপ্রিল রোববার মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহীদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সোহানুর রহমানকে (১৬) পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সোহানূর রহমানের মা পারভীনা বেগম জানান, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। সে পড়ালেখা করে। তিনি ছেলেকে ফেরতের দাবি জানান ।