পুলিশের হাতে গ্রেফতার চুয়াডাঙ্গা জেলার অপরাধ জগতের ২ নটরাজই পুলিশের ছেলে

 

স্টাফ রিপোর্টার: শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে আটক হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার অপরাধ জগতের নটরাজ ইমরান (২৪) ও তমাল (২২)। উঠতি বয়সী ভয়ঙ্কর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে তারা দু বন্ধু। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, আন্তঃজেলা ডাকাতদলের পরিচালক ইমরান। ইমরানের সেকেন্ড ইন কমান্ড তমাল। তারা উভয়ই পুলিশের সন্তান। ইমরান আলমডাঙ্গা বৈদ্যনাথপুরের সাবেক পুলিশ কনসটেবল আব্দুর রহমানের ছেলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আলমডাঙ্গা শহরের মসজিদপাড়ায় বসবাস। তমাল গোপালগঞ্জ জেলার হাটবাড়িয়া গ্রামের বদরুজ্জামান ওরফে বি জামানের ছেলে। ৯/১০ বছর পূর্বে আলমডাঙ্গা থানায় চাকরি করতেন বি জামান। থাকতেন সপরিবারে আলমডাঙ্গাতেই। সেই থেকে ইমরানের সাথে তমালের বন্ধুত্বের সূচনা। গত ৩০ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুঢ়হুদা থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী গ্রাম থেকে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলাসহ ২০টি মামলার আসামি তারা। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, তাদের অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্র বৃহত্তর কুষ্টিয়াজুড়ে।

কয়েক দিন পূর্বে দামুড়হুদার দেউলি গ্রামের সামসুল আলম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, দামুঢ়হুদা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র দেউলি গ্রামের সামসুল আলমের ছেলে সাইমুনসহ তার দু বন্ধু জাবেদ ইকবাল ও শিহাব গত ১৮ জানুয়ারি স্কুল শেষে বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে দেউলি প্রাইমারি স্কুলের সামনে নীল-কালো রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে ইমরান ও তমাল নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলে- তোরা মোবাইলফোনে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করিস। তোদের এখন ডিবি অফিসে যেতে হবে। সে সময় ডিবির এসআই পরিচয়দানকারী ইমরান তাদের ইভটিজিং মামলায় ফাঁসানোর ভয়-ভীতি দেখায় এবং ওই ছাত্রের কাছে থাকা মোবাইলফোন ৩টি হাতিয়ে নিয়ে ডিবি অফিসে দেখা করার কথা বলে দ্রুত সটকে পড়ে। পরে থানা ও ডিবি অফিসে খোজ নিয়ে জানা যায়, তারা ভূয়া পুলিশ। এ বিষয়ে ছাত্র সাইমুন ওইদিনই দামুড়হুদা থানায় একটি জিডি করেন। দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই ফিরোজ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেন এবং মোবাইলফোন ট্র্যাকিং এবং কললিস্ট চেক করে তাদেরকে শনাক্ত করেন। গত সোমবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবশেষে গাংনী গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেন।

আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেছেন, গ্রেফতার ইমরান আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড। সে কারণে আলমডাঙ্গা এলাকার চেয়ে দামুড়হুদা এলাকায় বেশি অবস্থান করতো। সে দামুড়হুদার দর্শনা কালিদাসপুর মোড় থেকে দু যুবকের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে মোবাইলফোন ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এছাড়া জয়রামপুর স্টেশনের অদূরে পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিঙেয়ের নামে দুই কিশোরের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। ইমরান কুষ্টিয়া আন্তঃজেলা ডাকাতদলের নেতা। তার নামে আলমডাঙ্গা থানায় ৩টি ওয়ারেন্ট আছে। সে ইতঃপূর্বে ইভটিজিং মামলায় ৯ মাসের জেল খেটেছে। ২০১১ সালে তার আলমডাঙ্গাস্থ বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ৭৮ রাউন্ড গুলিসহ তার মা মুকুলী বেগমকে গ্রেফতার করেছিলো। সে সময় ইমরান পালিয়ে যায়। তার নামে ২০১৪ সালে দুটি চুরি মামলা, ২০১৫ সালে একটি চুরি ও মারামারি মামলা এবং ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রুজু হয়। তার নামে কুষ্টিয়া, আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন থানায় ২০টি মামলা রয়েছে। ইমরান প্রায় ৬ মাস ধরে নীল রঙের পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে কখনও ফাঁড়ি পুলিশ, কখনও থানা পুলিশ আবার কখনও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গাসহ এর আশপাশ এলাকায় একের পর এক মোবাইলফোন ও মোটরসাইকেল ছিনতাই করে আসছিলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।