পুত্র সন্তান নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিকালে প্রসূতির মৃত্যু ॥ স্বামী উন্মাদ

চুয়াডাঙ্গা উপশম নার্সিং হোমে হৃদয়বিদারক দৃশ্য ॥ অবশেষে নবজাতক খালার কোলে

স্টাফ রিপোর্টার: বহুদিনের প্রত্যাশিত পুত্র সন্তান নিয়ে যখন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি, ঠিক তখনই যেন আকাশ ভেঙে পড়লো পুরো পরিবারের ওপর। প্রসূতি শাহীনা খাতুনকে তার নবজাতক পুত্র সন্তানকে রেখেই চলে গেলেন পরপারে। স্ত্রীর অকাল মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে স্বামী সাদেকুর রহমান মাসুম এখন উম্মাদ। গতকাল সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল সড়কের উপশম নার্সিং হোমে এ হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
শাহীনা খাতুনের মৃতদেহ গতরাতে নেয়া হয়েছে তার স্বামীগৃহ জীবননগরের মনোহরপুর মাঝেরপাড়ায়। আর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া স্বামীকে গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করেন। রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পথে আলমডাঙ্গা পৌঁছুলে তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যান। পরে তাকে আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। নবজাতককে রাখা হয়েছে তার খালাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ায়। খালা নাসিমা খাতুন তিন দিনের নবজাতককে নিয়ে পড়েছেন অথই সাগরে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের মনোহরপুর মাঝপাড়ার সাদেকুর রহমান মাসুমের সাথে বিয়ে হয় কালীগঞ্জ পাইকপাড়ার মেয় শাহীনা খাতুনের। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় সংসারে সন্তান এলেও এক মেয়ে ছাড়া বাঁচেনি অন্য দু মেয়ে। এবার অন্তঃসত্ত্বা হলে আলট্রাসনো করে দেখতে পান গর্ভে পুত্র সন্তান। প্রসববেদনা দেখা দিলে গত ১১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার উপশম নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই সিজার করে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ করা হয়। প্রসূতি ও নবজাতক সুস্থই ছিলো। গতকাল শনিবার বিকেলে নার্সিং হোম থেকে ওদের বাড়ি যাওয়ার কথা। এরই মধ্যে বিকেলে প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে প্রসূতির স্বামী তথা নবজাতকের বাবা মাসুম নার্সিং হোমে পৌঁছে স্ত্রীর অসুস্থতার কথা শুনে তিনে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। নার্সিং হোম থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময়ই মারা যান প্রসূতি শাহীনা খাতুন। অ্যাম্বুলেন্স থেকে মৃতদেহ নামিয়ে স্বামীকে রাজশাহী মেডিকেলের উদ্দেশে নেয়া হয়। অবশ্য আলমডাঙ্গা থেকে সাদেকুর রহমান মাসুম উম্মাদের মতো আচরণ শুরু করলে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রসূতির মৃতদেহ তার স্বামীর বাড়ি নেয়া হয়েছে। নবজাতককে রাখা হয়েছে খালা নাসিমা খাতুনের কোলে। তিনি দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ার হাফিজুর রহমান কারুর স্ত্রী। চুয়াডাঙ্গা উপশম নার্সিং হোমে প্রসূতির মৃত্যু, প্রসূতির স্বামীর অসুস্থতা ও নবজাতকের মা হারানোর দৃশ্য দেশে অনেকেই চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেউ কেউ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, যখন ওদের হাসিমুখে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি, তখনই ঘটলো হৃদয়বিদারক ঘটনা।