পিতা হত্যার বদলা নিতে অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী যদুর পতন

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বোয়ালমারী কানাইবাবুর আমবাগান থেকে চরমপন্থির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি : পিতা নজুকে তার প্রতিপক্ষ মেরেছিলো বাড়ির উঠোনে পিটিয়ে। ছেলে যদু পিতা হত্যার বদলা নেয়ার প্রতিহিংসায় অন্ধকার জগতে নেমে প্রাণ হারালো প্রতিপক্ষের গুলিতে। গতপরশু রাতে তাকে গুলি করে খুন করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে দামুড়হুদার বোয়ালমারী কানাইবাবুর আমবাগান থেকে উদ্ধার করা হয় লাশ। বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে যদু ওরফে সুমনের লাশ তার নিজ গ্রাম রামনগরে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় কে বা কারা তার বুকের দু পাশে দুটি গুলি করে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ উপজেলার বোয়ালমারীর কানাইবাবুর আমবাগানে ফেলে রেখে যায়। গতকাল বুধবার সকালে কৃষকরা মাঠে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে তার লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। হাসপাতালমর্গে নিহত সাইফুলের চাচাতো ভাই জহুরুল লাশ শনাক্ত করেন। সে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের রামনগর নতুনপাড়ার মৃত নজরুল ইসলাম ওরফে নজুর বড় ছেলে। বাদ মাগরিব নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আবু জাহের ভূঁইয়া বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। তবে তাকে পুলিশ নাকি দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

এলাকাবাসী জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা অজ্ঞাতনামা যুবককে অন্য কোনো স্থানে গুলি করে হত্যা করে এবং তার লাশটি দামুড়হুদা উপজেলার বোয়ালমারীর কানাইবাবুর আমবাগানে ফেলে রেখে যায়। গতকাল বুধবার সকালে কৃষকরা মাঠে যাওয়ার সময় আমবাগানের মধ্যে গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত পরিচয়েই লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালমর্গে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী আরো জানায়, যদি তাকে ওই আমবাগানের মধ্যেই গুলি করে মারতো তাহলে সেখানে রক্তের দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো। তাকে অন্য কোনো স্থানে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে তার মৃতদেহ ওই আমবাগানের মধ্যে ফেলে রেখে যায়।

দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হত্যাকাণ্ডে কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে দলীয় কোন্দলের জের ধরে তাকে খুন হতে হয়েছে। নিহত সুমন জনযুদ্ধের আঞ্চলিক কমান্ডার। তার বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় ৪টি হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি, ছিনতাই ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।

নিহত সাইফুল ইসলাম যদু ওরফে সুমনের পরিচয়: দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের রামনগর উত্তরপাড়ার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল। সে ছিলো ৩ ভাইয়ের মধ্যে সকলের বড়। মেজ ভাই ফকির ঢাকার গার্মেন্টসকর্মী এবং ছোট ভাই রাশেদ আলুকদিয়ায় শ্বশুরবাড়ি ঘরজামাই থাকে। সাইফুলের পিতা নজরুল ইসলাম নজু বছর দশেক আগে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। বাড়ির উঠোনে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকেই যদু প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে। প্রতিশোধের নেশায় অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। সে তার তার চাচা আশাদুল বছর পাঁচেক আগে জেলখানায় মারা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত। সে প্রথমে ঝিনাইদহ জেলায় বিয়ে করে। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে পক্ষের ১ ছেলে সন্তান আছে। প্রথম স্ত্রী চলে যাওয়ার পর সে আলমডাঙ্গা উপজেলার পুটিমারী গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সে ঢাকায় থাকতো। এ পক্ষেও তার ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।