পাবলিক পরীক্ষায় এবার ৩২ সেট প্রশ্নপত্র

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ফাঁসরোধে তদন্ত কমিটি বিষয়প্রতি ২০ সেট প্রশ্নপত্র তৈরির সুপারিশ করেছিলো।শিক্ষাবোর্ড প্রণয়ন করছে ৩২ সেট। এখন থেকে এসব প্রশ্নের মধ্য থেকেই বাছাইকরে যে কোনো একটিতে নেয়া হবে পরীক্ষা। প্রতিটি শিক্ষাবোর্ড আলাদাভাবে এপ্রশ্নপত্র তৈরি করবে, যাতে একটি বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস হলে সারা দেশেরপরীক্ষা স্থগিত করতে না হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য বিভিন্নবোর্ডের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানোহয়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের প্ল্যাটফর্ম আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সাথে তারা আগামী ২নভেম্বর থেকে এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা শুরুরওসিদ্ধান্ত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এবার এ পরীক্ষায়সারা দেশে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, ৩২ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ণের এ সিদ্ধান্ত তারা জেএসসিপরীক্ষা থেকেই বাস্তবায়নের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপেলে তারা কাজটি পুরোদমে শুরু করবেন। তিনি আরও জানান, সৃজনশীল বিষয়েরপ্রশ্নপত্র এতোদিন সারাদেশে অভিন্ন হয়ে আসছিলো। কিন্তু এবার থেকে প্রত্যেকবোর্ড নিজ নিজ প্রশ্ন প্রণয়ন করবে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা যেসববিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে, সেগুলো আলাদা ছাপানো হবে।

এবারের এইচএসসিরইংরেজি ও গণিতসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এরবাইরে বিগত জেএসসিসহ আরও কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগরয়েছে। এর মধ্যে সরকার এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠনকরেছে, তারা ২৯ জুন তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এতে মূল চারটিসহ মোট ৬৬টিসুপারিশ রয়েছে। এর মধ্যে ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁস রোধে বেশকিছু সুপারিশ করাহয়। এর অন্যতম হলো- পাবলিক পরীক্ষার জন্য বিষয়প্রতি ২০ সেট করেপ্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে ৫ সেট নির্ধারণকরে ছাপিয়ে তাতে পরীক্ষা গ্রহণ করা। এই প্রশ্ন তৈরি, রেটিং, মডারেশন ওডিজিটাল প্রিন্টিং সিস্টেমে ছাপার উপযোগী আউটপুট পাওয়ার জন্য সফটওয়্যারতৈরির সুপারিশও রয়েছে এ কমিটির।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমন পদক্ষেপের মাধ্যমেপ্রশ্নফাঁস রোধে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেলো।এব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, তাদের করাপ্রধান চারটি সুপারিশের একটি ছিলো ফাঁস রোধে ২০ সেট প্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপিপ্রণয়ন। সিলেবাস অনুযায়ী দক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষিত ও সুনামধারীশিক্ষকমণ্ডলীর মাধ্যমে বিষয়, অধ্যয় ও প্রশ্নের মানবণ্টন অনুসারে সব বিষয়েরজন্য সম্ভাব্য এ প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে।

বর্তমানে জেএসসি, এসএসসি ওএইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার জন্য ৪ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। প্রথমেপ্রশ্নসেটার খসড়া প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। এর পর ৪ মডারেটর সেখান থেকেচূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে দুটি সেট বেছেনিয়ে ছাপানো হয়, যার মধ্য থেকে যে কোনো একটিতে পরীক্ষা নেয়া হয়। তবে ৩২ সেটপ্রশ্নের পাণ্ডুলিপি তৈরি হলে তার মধ্যে কয়টি ছাপানো হবে সে তথ্য জানাতেঅপারগতা প্রকাশ করেন ঢাকাবোর্ডের চেয়ারম্যান।এবার এইচএসসির ইংরেজিরক্ষেত্রে ছাপানো দুসেট প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যায়। আর গণিতের ক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়ার পর সরকার সংরক্ষিত বাকি দুসেট থেকে আরও একটি (অর্থাৎতৃতীয় সেট) প্রশ্ন ছাপে। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন বিকেলে সেই প্রশ্নও ফাঁসহয়ে যায়। এরপর কর্মকর্তারা ফের বৈঠকে বসে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে মূল তিনসেট প্রশ্নের সাথে মিলিয়ে যেটি অপেক্ষাকৃত কম মেলে, সেটিতে পরীক্ষা নেয়। এঘটনা থেকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং তদন্ত কমিটি সন্দেহ করছে, তৃতীয় সেট প্রশ্নফাঁস হয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই সন্দেহের তীর বিজি প্রেসের দিকে যায়।

তদন্তকমিটির সদস্যসচিব জানান, কোনো একটি বিষয়ের পরীক্ষার জন্য যে তৃতীয় সেটপ্রশ্ন ছাপা হচ্ছে, তা যে কারোরই জানার কথা নয়। তাই এ খবর যারা জানেন, তারাই এবারের এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস করেছেন।এবার জেএসসিতে নতুন করে তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। এটিসহ মোট ১২ বিষয়ে এবারসৃজনশীল প্রশ্ন হবে। ৩২ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করলে ব্যয় বাড়বে কিনা বা এরপ্রভাব পরীক্ষার ফির ওপর পড়বে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকাবোর্ডেরপরীক্ষানিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এবার থেকেতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের একটি পরীক্ষা বেশি নিতে হচ্ছে। এজন্যএমনিতেই খরচ বাড়ছে। এর সাথে প্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা বাড়াতে গেলেওখরচ কিছুটা বাড়বে। সেই হিসাবে ফিও বাড়তে পারে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপকতাসলিমা বেগম জানান, ফি বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে তারা পাঠিয়েছেন।সরকার অনুমোদন করলে তারা ফি বাড়ানোর কথা সবাইকে জানিয়ে দেবেন। তিনি আরওজানান, এবারও গত বছরের মতো ১৬ দিনে জেএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবনা ওরুটিন তৈরি করা হয়েছে। সেটিও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।