পাখি-বিন্দাসে বিভোর উঠতি বয়সীরা : দামের দাপটে দম বন্ধের উপক্রম হলেও থেমে নেই বিক্রি

 

চুয়াডাঙ্গায় ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে : গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাড়িয়েও ক্রেতাদের ভিড় দেখে বিক্রেতাদের স্বস্তির শ্বাস

আনজাম খালেক/খাইরুজ্জামান সেতু: বড় বড় হরফে লেখা আছে একদর। ফিক্সড প্রাইজ। অথচ লেখা নেই কতো টাকায় কেনা আর কতো টাকায় বিক্রির তালিকা। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা মার্কেটিং অফিসারকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন সম্প্রতি আভিযান চালিয়ে একটি কাপড়ের দোকানে জরিমানাও করে। তাতেও তেমন কাজ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, ঈদের জমজমাট বাজারে অনেকেই ইচ্ছেমতো হাকাচ্ছে শাড়ি, জামা কাপড়ের দাম। দাম হাকলে কী হবে? ক্রেতাদের কারো কারো কপালে ভাজ পড়লেও অনেকেই দেদারছে কিনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে ফিরছেন বাড়ি। তা না হলে টেইলার্সে কেউ ৩৭ হাজার টাকার থ্রি পিস তৈরি করতে দেন?

এক আদরের দুলালী এবার পাচ্ছেন ৩৭ হাজার টাকা মূল্যের থ্রিপিস। এটা তৈরি করতে দেয়া হয়েছে নিউ মার্কেটের জোনাকি টেইলার্সে। আর নতুন জামার আবদারে সাড়া না পেয়ে অভিমানি স্কুলছাত্রী ইয়াসমিন আত্মহত্যা করেছে। সে আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া গ্রামের দরিদ্র হান্নানের মেয়ে। ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিন গত ১৫ জুলাই আত্মহত্যা করে। চুয়াডাঙ্গায় ধনী-গরিবের এরকমই বৈষম্য বিদ্যমান। যাদের সামর্থ রয়েছে তারা নতুন জামা-কাপড় কিনছে হরদম, আর যাদের আয় স্বল্প, তারা দোকানে দোকানে ঘুরে ছাড়ছেন নাভিশ্বাস। সন্তানের আবদার মেটাতে না পারার দুশ্চিন্তায় কপালের ভাজ গভীর থেকে আরো গভীর হচ্ছে।

গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সমবায় নিউ মার্কেট, প্রিন্স প্লাজা, আলী হোসেন সুপার মার্কেট, মুন সুপার মার্কেট, রেলবাজারের আলহাজ শাহাবুদ্দিন মার্কেট, রেলবাজারের রাস্তার পাশের বিপণি বিতান ও মালিক টাউয়ারসহ বড় বাজার পুরাতন গলির ভেতরের বিপণি বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে ঈদের কেনাকাটার ভিড়। তাদের অধিকাংশই নারী। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাড়িয়েও ক্রেতা সাধারণের ভিড় দেখে স্বস্তির শ্বাস ছেড়েছেন অধিকাংশ দোকানি। বেচাকেনা কতোটা জমলো? এর তড়িত জবাব তৈরি পোশাকের দোকানিদের। কেবল জমতে শুরু করেছে। ক্রেতাদের এবারের পছন্দের পোশাক কী? দোকানিদের মুখ দিয়ে নামের ফোয়ারা ছুড়তে শুরু হলো। শেষ পর্যন্ত তালিকা বের করে তারা বললেন, পাখি, পানকৌড়ি, পামেলা ও প্রেমজয় মেয়েদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এসব কেমন পোশাক? দোকানি বের করে দিলেন নানা রঙের বাহারি কায়দায় তৈরি করা পোশাক। এসবই নাকি ইন্ডিয়ান বিভিন্ন চ্যানেলের ধারাবাহিকের নায়িকার পরনের। সেই সুবাদেই পোশাকগুলোর নামকরণও করা হয়েছে। দাম? দেড় হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজারের মধ্যে। আরো দামের আছে। বিক্রেতারা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বেশি দামেরটা বিক্রি হবে না ভেবেই অতো দামেরটা আর আনা হয়নি। মেয়েদের-ছেলেদের পোশাক? ঈদে পাঞ্জাবিটা তোই চাই-ই। এবার শর্টপাঞ্জাবি আর কুর্তার চাহিদা বেশি। আড়ং পাঞ্জাবিরও চাহিদা বেড়েছে। হরেক রকমের দাম। কাপড় বুঝে হাকা হচ্ছে মূল্য। কুর্তার দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে শুরু করে দশ-বিশ হাজার টাকা। পাঞ্জাবির দামও এবার কম নয়। সাড়ে ৬শ থেকে শুরু করে দু হাজার টাকা পর্যন্ত। শাটের মধ্যে বিন্দাস, হৃদয় রেমন্ডও বিক্রি হচ্ছে ভালো। প্যান্ট মানেই যেনো স্টিজ জিন্স। ব্রান্ডের প্যান্টই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ব্রান্ডের প্যান্টের দামও বেশি। অরন্য, সিংহ, হৃদয়, রেমন ও ভিকিংস নামের প্যান্টের দিকে অধিক ঝোক যুবকদের। কেউ কেউ ক্রেতা বুঝে দাম চাইলেও অধিকাংশ বিক্রেতাই অন্যদিকে তাকিয়ে হাকছেন মূল্য। আর যদি সন্তান সাথে করে নিয়েছেন, তো ধরা খেয়েছেন। ছেলে বা মেয়ের পছন্দ হলেই বিক্রেতা বুঝেই মারবে কষে। পকেট ফাঁকা হলেও পিতা মাতার আর কি করা। গোচে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। একদরের দোকানে? দাম করতে পারছেন না, অথচ জানতেও পারছেন না ওটা আসলে কতো টাকায় দোকানির কেনা। একদরের দোকান গুলোতে যেমন ইচ্ছে মতো দাম হাকাচ্ছে, তেমনই একদর শব্দটি লেখা নেই যেসব দোকানে ওইসব দোকানের কিছু দোকানি আছেন আকাশ ছোঁয়া দাম হেকে বসে থাকছেন। কোমাবেন কতো? যেভাবে শাড়ি কাপড়ের দোকানে ভিড়, অতোটা ভিড় এখনও জুতো কসমেটিকের দোকানে লাগেনি। কিছু জোতার দোকানি আছেন যাদের বাড়িতেই জুতোর গায়ে মারা হচ্ছে ব্র্যান্ডের সিলসাপ্পড়। ঈদ বলে কথা। এক ঈদের ইনকাম দিয়ে গোটা বছর চলতে হবে না? এক দোকানি তো হাসির ছলে এরকমই উক্তি আওড়ালেন।