পাঁচ দিনে ১৫ হজ ফ্লাইট বাতিল : অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন ৪২ হাজার হজযাত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: ৯১টি হজ এজেন্সির মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি ও ভিসা জটিলতার কারণে পর্যাপ্ত হজযাত্রী পাচ্ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস। আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৫ দিনে দুটি এয়ারলাইনস ১৫টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। গত ৫ দিনে দুটি বিমান সংস্থার হজযাত্রী পরিবহন ক্ষমতা কমেছে প্রায় ৫ হাজার।

বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে আরও কিছুদিন ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত থাকলে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কারণ, হজযাত্রী পরিবহনের জন্য বিমান নির্দিষ্টসংখ্যক স্লট (জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণের) বরাদ্দ পায়। একটি ফ্লাইট বাতিল হলে ওই স্লট নষ্ট হয়ে যায়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে মাসব্যাপী হজযাত্রীদের জন্য বিমানের বিশেষ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ভিসা জটিলতা ও মোয়াল্লেম ফিসহ নানাবিধ কারণে যাত্রীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশ বিমানে ১৭৭টি হজ ফ্লাইটের মধ্যে ৯টি হজ ফ্লাইট এরই মধ্যে (গতকাল পর্যন্ত) বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে পরের দিকে বিমানে যাত্রী পরিবহনের চাপ বাড়বে। তিনি বলেন, ৮৫ হাজার যাত্রীর পাসপোর্ট এখনো হাতে পায়নি হজ অফিস। টিকিট পেয়েও ভিসা জটিলতায় জেদ্দা যেতে পারেননি ৭ হাজারের বেশি যাত্রী। বিমানমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা বিমানের নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিগুলোর জটিলতায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ভিসা পেয়েছেন ৪১ হাজার ৭১৪ জন।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, উড়োজাহাজ প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও হজযাত্রী না পাওয়ায় গতকাল আরও ৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান। আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কারণে মোট ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা দাঁড়াবে ১২টি। এসব ফ্লাইটে প্রায় ৫ হাজার হজযাত্রীর জেদ্দা যাওয়ার কথা ছিলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যাত্রীসংকটের কারণে সৌদি এয়ারলাইনস এ পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ ছাড়া অনেকগুলো ফ্লাইটে আসন খালি গেছে। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ২৭ হাজার ৮০৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমানে গেছেন ১৩ হাজার ৩১৫ জন এবং সৌদি এয়ারে গেছেন ১৪ হাজার ৪৯২ জন।

এই সংকট সম্পর্কে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, ৯১টি হজ এজেন্সি মোয়াল্লেম সঙ্কটে পড়ে। ফলে মোয়াল্লেমরা তাদের ফি বাড়িয়ে দেয়। ফি ছিলো ৭২০ সৌদি রিয়াল। তারা এখন চাইছে ১ হাজার ৫০০ রিয়াল (১ রিয়াল‍=২২ টাকা)। এর ফলে যাত্রীপ্রতি প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু এই বাড়তি টাকা হজযাত্রীরা দিতে রাজি হচ্ছেন না। আবার হজ এজেন্সিও লোকসান দিতে রাজি নয়। তাই তারা একটু দেরিতে ঘরভাড়া করে খরচ পোষানোর চেষ্টা করছে। এদিকে মোয়াল্লেম ঠিক না হলে সৌদি আরবে ঘরভাড়া চুক্তি করা যায় না। আর ঘরভাড়ার চুক্তি না হলে বারকোট পাবে না। ঘরভাড়ার বারকোট ছাড়া ঢাকায় সৌদি দূতাবাস ভিসা দিতে রাজি নয়।

হাবের ওই সূত্রটি বলছে, এই ৯১ এজেন্সির কাছে হজযাত্রী আছে ১৮ হাজার ৪০০ জন। তারা সবাই শুরুর দিকের হজ ফ্লাইটের যাত্রী। মূলত এদের কারণে এখন হজ ফ্লাইট বাতিল বা এখনকার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বাকি হজযাত্রীদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৪৫ হাজার জনের ভিসা হয়ে গেছে।

এ ছাড়া হাব বলছে, এবার পাসপোর্টের সাথে আলাদা কাগজে ই-ভিসা দিচ্ছে দূতাবাস। দূতাবাসের সার্ভারের জটিলতায়ও কারও কারও ভিসা পেতে সময় বেশি লাগছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। গত ২৪ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিমান হজযাত্রী পরিবহন শুরু করে। বাংলাদেশ বিমান মোট ৬৩ হাজার ৫৯৯ জনকে পরিবহন করবে। বাকিরা যাবেন সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে।