পশ্চিমের জেলাগুলোতে ধান চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী

স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমের জেলাগুলোতে ধান চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা। চাষির ঘরের ধান ফুরানোর পর বাজার চড়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের উত্পাদন ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলাতে এবার বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এসব জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ লাখ ৬১ হাজার ২২০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৫ হেক্টরে। গত বছরের চেয়ে এক লাখ হেক্টর কম জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। বেশ কয়েক বছর যাবত্ ধানের দাম কম পাওয়ায় চাষি চলতি বছরে বোরো চাষ কমিয়ে দেয়। তারা ডাল জাতীয় ও অন্য ফসলের চাষ করে।

এপ্রিল মাসে নতুন বোরো ধান ওঠার পর মোটা ধান স্বর্ণ, গুটি স্বর্ণ, রত্না ও বি আর-৩৩ জাতের ধান প্রতি মন সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। বড় বড় চালকল মালিক ও মজুতদাররা ধান কিনে মজুত করে। চাষির ঘরের ধান ফুরিয়ে গেলে মোটা ধানের দাম চড়তে থাকে। বর্তমানে হাট বাজার ও মজুতদারদের আড়তে প্রতি মণ মোটা ধান সাড়ে ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাত মনে ৩শ টাকা বেড়েছে। ফসল ওঠার পর মাঝারি সরু বিআর-২৮ ও সুবললতা ধানের দাম ছিলো সাড়ে ৬শ টাকা থেকে ৭শ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৯শ টাকা দরে। সরু ধান মিনিকেট ও বাসমতি ধান ওঠার পর প্রতি মণ সাড়ে ৮শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এখন সাড়ে ৯শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

বোরো ধান ওঠার পর এপ্রিল মে মাসে বাজারে মোটা চালের চাহিদা কম ছিলো। পাইকারী প্রতি কেজি ২১-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিলো। আর খুচরা ২৩-২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিলো। জুন থেকে ধানের দাম বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চালের দাম বেড়ে চলেছে। মোটা চাল কেজি প্রতি কমপক্ষে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। স্বর্ণ, গুটি স্বর্ণ ও রত্না চাল পাইকারী ৩৩/৩৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা প্রতি কেজি ৩৫/৩৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চিকন চাল বিআর-২৮ ও সুবলতলা প্রতি কেজির ৩৪/৩৫ টাকা দাম ছিলো এখন বেড়ে হয়েছে ৪০/৪১ টাকা। কাজলতলা ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪০/৪১ টাকা হয়েছে। মিনিকেট চালের দাম ছিলো ৪০/৪২ টাকা। এখন বেড়ে ৪৬/ ৪৭ টাকা হয়েছে।

চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বিশ্বাস জানান, চালের বাজার অটো মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। প্রচুর ধান মজুত আছে। ওই চাল এখন চড়া দামে বিক্রি করছে মজুতদাররা। তিনি বলেন, সরু চালের দাম তুলনামূলকভাবে কম বেড়েছে। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা মোকামের চাল ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মোল্লা ও কুষ্টিয়ার খাজানগরের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, চালের বাজার এখন অটো চাল মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে।

দেশের প্রধান চাল উত্পাদনকারী এলাকা হচ্ছে কুষ্টিয়ার খাজানগর। এখানে সরকার নিবন্ধিত চালকল আছে ৩৬৪টি। তার মধ্যে অটোমিল আছে ৩১টি। কয়েক বছর ধরে চালের বাজার মন্দা ছিলো। প্রতিদিন খাজারনগর থেকে এক-দেড়শ’ ট্রাক চাল দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান যায়। অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টি শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। অটোমিল মালিকদের গুদামে ধানের মজুত নেই। মিল চালু রাখার জন্য যে পরিমাণ ধানের দরকার, সে পরিমাণ ধান মজুত আছে। আর এখন তেমন ধান পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ থেকে ধান আসে। বন্যার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। এসব কারণে চালের উত্পাদন ব্যয় বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এদিকে আমন ধান না ওঠা পর্যন্ত ধানের দর পতনের সম্ভবনা নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে মাঠে আউশ ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পর বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন দাম কিছুটা কমতে পারে।