পল্লি বিদ্যুত সমিতির ইলেক্ট্রিশিয়ান আলমডাঙ্গার রামদিয়ার সুমনের বিরুদ্ধে ভুয়া খরচ দেখিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পল্লি বিদ্যুত সমিতির ইলেক্ট্রিশিয়ান আলমডাঙ্গা রামদিয়া গ্রামের সুমনের বিরুদ্ধে ঘর ওয়ার্রিং বাবদ নির্ধারিত অর্থের ৩/৪ গুণ বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। রামদিয়া-কায়েতপাড়ার শতাধিক পরিবারের নিকট থেকে বিভিন্ন ভুয়া খরচ দেখিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। দাবি তুলেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাতেগোনা কয়েকজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের বিরুদ্ধে গ্রাহক সাধারণ অভিযোগ তুলে বলেছে, পল্লি বিদ্যুত সমিতির কর্মকর্তারা বিশেষ শর্তে এলাকা ভাগ করে একেক জন ইলেক্টিশিয়ানকে একেক এলাকায় নির্দিষ্ট করে দায়িত্ব দেয়ার ফলে নির্ধারিত এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান সামন্ত প্রভুর মতো হয়ে উঠেছে। যতো টাকা চাইবেন গ্রাহক তা পরিশোধ না করলে বিড়ম্বনা বেড়ে যায়। রামদিয়া-কায়েতপাড়া এলাকার পল্লি বিদ্যুত গ্রাহকদের অনেকেই এসব অভিযোগ করে বলেছেন, এ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান সুমন আলী। ওই এলাকায় পল্লি বিদ্যুত সংযোগ নিতে হলে গ্রাহক সাধারণকে তার দারস্থ হতেই হয়। ঘর ওয়ারিং করেন তিনি। প্রতিটি সংযোগের ওয়ারিং বাবদ নির্ধারিত ৬শ টাকা করে মজুরি নেয়ার বিধান থাকলেও তিনি তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানেননি। তিনি প্রত্যেক গ্রাহকের নিকট থেকে মিটার সংযোগসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাতে খরচের অজুহাতে ১০ থেকে ২৪ হাজার পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

আলমডাঙ্গা পল্লি বিদ্যুত সমিতির অফিসসূত্রে জানা গেছে, শুধু প্রত্যেক গ্রাহকের নিকট থেকে ৬শ ২০ টাকা করে জামানত ও সদস্য ফি নেয়া হয়। আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খাতে কিছু খরচ হলেও তা মোটের ওপর ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না। অথচ ইলেক্ট্রিশিয়ান সুমন আলীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ওই এলাকার গ্রাহকদের নিকট থেকে ২ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগ উত্থাপনকারীদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, রামদিয়ার জামালের স্ত্রী সেলিনা খাতুনের নিকট থেকে ১১ হাজার ১শ, খালেক আলির নিকট থেকে ১৯ হাজার, আইন উদ্দীনের নিকট থেকে ১২ হাজার, মাছেম আলির নিকট থেকে ১১ হাজার ২শ, তুরানের নিকট থেকে ১৩ হাজার, আনেছা খাতুনের নিকট থেকে ১৩ হাজার, ফাতেমা খাতুনের সাড়ে ১২ হাজার, ফরিদ জোয়ার্দ্দারের ১৩ হাজার, নাসের আলীর নিকট ১২ হাজার, শওকত আলির নিকট ১০ হাজার, মকবুলের নিকট ২৪ হাজার, আলম জোয়ার্দ্দারের নিকট ১৩ হাজার, কায়েতপাড়ার লালনের নিকট থেকে ১০ হাজারসহ ওই এলাকার শ শ গ্রাহকের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রায় ৫/৬ মাসের অধিক সময় ধরে সে এসব টাকা আদায় করেছে। এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় সে এ সকল অপকর্ম নির্বিঘ্নে দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিপত্তি ঘটেছে, পল্লি বিদ্যুত সমিতির নির্বাচিত নতুন পরিচালক খলিলুর রহমান ওই এলাকা পরিদর্শন করার ঘটনায়। সে সময় তিনি বিদ্যুত সংযোগ নিতে কোন খাতে কতো টাকা খরচ হয় তা সকলকে বলে আসলে। এর পরপর পল্লি বিদ্যুত সমিতি আলমডাঙ্গার ডিজিএম কর্তৃক ওই এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করার ঘটনা। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের অনেকেই দালাল না ধরে সরাসরি নিজেরা অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসল সংবাদ জানতে পেরেছে। রামদিয়ার প্রতারিত গ্রাহক তুরান আলী মোবাইলফোনে জানিয়েছে, ইলেক্ট্রিশিয়ান সুমন গ্রামের ছেলে হয়েও সকলের সাথে রীতিমত ডাকাতি করেছে। এখন যেহেতু তার প্রতারণার বিষয়টি সকলের সাথে সাথে পল্লি বিদ্যুত সমিতিও জানতে পেরেছে, তাদের উচিত এমন অসৎ ব্যক্তি বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের। তার জন্য সমিতির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই দাবি তুলেছে অতিরিক্ত টাকা ফেরতের। পল্লি বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা অফিসের ডিজিএম বলেন, দালালচক্রের আধিপত্য থেকে গ্রাহক সাধারণকে রক্ষা করতে তিনি গ্রামে গ্রামে মাইকিং করেছেন। সবাইকে যেকোনো কাজে দালাল না ধরে সরাসরি তার নিকট যেতে বলেছেন । তিনি গ্রাহক সাধারণ যাতে প্রাতারিত না হন সে জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

পল্লি বিদ্যুত সমিতির সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, তিনি এ ধরনের অভিযোগ শুনেছেন। দীর্ঘদিনের অনিয়ম একদিনে দূর করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সাধারণ গ্রাহকদের বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও তারা দালালদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি দালাল না ধরে সকলকে ধৈর্য ধরে নিয়মতান্ত্রিক পথে কাজ করানোর জন্য বলেন। সকলকে নিজেদের কাজের জন্য নিজেরাই অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন।