পদ্মায় তীব্র স্রোত : পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় চরম দুর্ভোগ

 

৩৫ ফেরির ২১টি অচল : ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় শ শ যানবাহন

স্টাফ রিপোর্টার: গত কয়েকদিন ধরে পদ্মার ফেরিঘাটে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষার পরও মিলছে না ফেরি। ঈদের সময়েও বাড়িতে যেতে যাত্রীদের এতো দুর্ভোগ পোয়াতে হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,পদ্মার তীব্র স্রোতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-কাওড়াকান্দিতে নৌরুটে ফেরি-লঞ্চ চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। দুই ঘাটে ৩৫টি ফেরির মধ্যে ২১টিই অচল হয়ে পড়ে আছে। কার্যত দুই নৌ-পথে ফেরী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফেরি স্বল্পতা ও ঘাট ডুবে যাওয়ায় উভয় ঘাটে যানজট লেগেই আছে। শ শ যানবাহন ফেরী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর-ঢাকার দিবা ও নৈশকোচগুলোর অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে আসা-যাওয়া করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি যোগাযোগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। অভিন্ন চিত্র মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ রুটেও। নদীর উভয় পাড়ে শ শ যানবাহন আটকা পড়েছে। নদী পার হতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। এতে করে হাজার, হাজার যাত্রী সাধারণ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোটে নদী পারাপার হচ্ছেন। আরিচা ফেরি টার্মিনালের নিকট যমুনার পানিতে দোকানপাট তলিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক  বলেন, নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে মাওয়া ও কাওড়াকান্দি পয়েন্টে ৫টি টাগবোট কাজ করছে। ফেরীর পাশাপাশি টাগবোট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, দৌলদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাতায়াতকারী ১৮টি ফেরীর মধ্যে ৯টিই বর্তমানে অচল হয়ে আছে। অন্যদিকে মাওয়া-কাওড়াকান্দিতে ১৭টি ফেরীর মধ্যে ১২টি ফেরী ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। একাধিক পল্টুন ভেসে গেছে। নতুন করে কোনো ফেরি বা পল্টুন চালু করা হয়নি। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় গাবতলী থেকে বাসে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাত্রা করেন আবুল হোসেন। রাত ৮টার দিকে আবুল হোসেন জানান, যশোর পর্যন্ত পৌঁছেছেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ৪ ঘণ্টায় অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।

ছালেহা খাতুন নামের আরেক যাত্রী জানান, শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে তিনি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্টান্ডে এসে পোঁছান তিনি। ফেরিঘাটে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাকে।

রুহুল আমিন নামের এক যাত্রী শুক্রবার সকাল ৯টায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিকাল ৫টার মধ্যে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু পৌঁছান রাত ২টায়। দৌলতদিয়া ফেরীঘাটে প্রায় ৯ঘন্টা বাড়তি সময় তাকে অপেক্ষা করতে হয়। তাদের মত আরও অসংখ্য যাত্রীকে এখন ফেরীঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে ফেরি স্বল্পতা ও ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় উভয় ঘাটে যানজট লেগেই আছে। পুলিশ এ রুটের পরিবর্তে যানবাহন মালিক-চালকদের যমুনা সেতু ও মাওয়া ঘাট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৌলতদিয়ায় তিনটি ও পাটুরিয়ায় দু’টি ফেরি ঘাট তড়িত্ মেরামতের মাধ্যমে যানবাহন লোড-আনলোড করছেন। তবে তীব্র স্রোতে ফেরির ট্রিপ কমে যাওয়ায় উভয় ঘাটে অপেক্ষমান যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা সেক্টর এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, এ রুটে বহরের ১৮টির মধ্যে ১২টি ফেরি সচল রয়েছে। বাকি ফেরিগুলো যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে মেরাততের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, ইঞ্জিন দুর্বলতার কারণে ২/৩টি রো-রো ফেরি প্রবল স্রোত ও ঢেউ এড়িয়ে গন্তব্যে যেতে না পারায় ঘাটে অলস পড়ে আছে। মাল বোঝাই অন্তত চারশ’ ট্রাকসহ সহস্রাধিক যানবাহন উভয় ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে পাটুরিয়া ঘাট ও ফেরিতে উপযুক্ত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি চালক ও যাত্রীদের বিশেষ করে নারী-শিশুদের দারুন দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। উভয় ঘাটে অপেক্ষমান যাত্রীসাধারনের নিকট হোটেলের বাসিপচা খাবার ও বেশিদামে পণ্যসামগ্রী বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সংঘবদ্ধচক্র ও চিহ্নিত সিন্ডিকেট সদস্যরা ঘুষ নিয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরিতে গাড়ি তুলে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।