ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে অন্ধকারে ফিরে যেতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ এখন একক কোনো দেশের সমস্যা নয়। এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সব দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬ তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

বিশ্বের সব দেশকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। শান্তির বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ না করলে পুরো বিশ্বকে অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে হবে। গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি ব্যবস্থা নয়। এটি সমস্যা থেকে উত্তরণের একটি পথও বটে। বিশ্বের সব দেশকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার করার ক্ষেত্রে আইপিইউ বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বহু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেলেও এখনো সারা বিশ্বের ৮০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ক্ষেত্রে আইপিইউর পক্ষে বড় ধরনের ভূমিকা রাখা সম্ভব। একই সাথে সংগঠনটি দারিদ্র্য বিমোচন, বিশ্ব শান্তি রক্ষা ও মানবাধিকার সুনিশ্চিতে বিশ্বের সব দেশকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে পারে। অনুষ্ঠানে সবাই ইংরেজিতে বক্তৃতা দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলায় বক্তব্য দেন। বক্তৃতা শেষে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর আইপিইউ টেলিভিশনের উদ্বোধন ও স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এর আগে সম্মেলনের সভাপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনে (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আইপিইউ সম্মেলন আয়োজন করতে পেরে বাংলাদেশ গৌরব বোধ করছে। বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনীতির উন্নয়ন, তৈরি পোশাক খাতে বিস্তারসহ উন্নয়নের অন্যান্য দিক তুলে ধরনে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের সুন্দরবন ও কক্সবাজারসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলোর বর্ণনা তুলে ধরেন। জঙ্গিবাদের অপতৎপরতার মধ্যেও ভয়কে জয় করে বাংলাদেশে আসার জন্য বিভিন্ন দেশের স্পিকার ও সাংসদের ধন্যবাদ জানান আইপিইউর প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে নিরাপত্তার বিষয়টি বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন আগে ব্রিটেনে হাউস অব কমন্সের সামনে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। তা সত্ত্বেও আপনারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে এক মঞ্চে জড়ো হয়েছেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করেছি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আইপিইউ আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের মঞ্চ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইপিইউর মহাসচিব মার্টিন চুংগং। এর আগে সভাপতি শিরীন শারমিনের বক্তব্যের পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজের বাণী পড়ে শোনানো হয়।  অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এতে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, মন্ত্রিসভার সদস্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।