নেতৃত্বের শীর্ষে অহিদুল বিশ্বাস ও বাবু খান : অবস্থান হারালেও কমিটিতে মোজাম্মেল-দুদু

 

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও অনুমোদন

 

স্টাফ রিপোর্টার: সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও অনুমোদন দিয়েছে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জেলা বিএনপির শীর্ষ স্থান থেকে ছিটকে পড়েছেন সাবেক দু সংসদ সদস্য হাজি মোজাম্মেল হক ও শামসুজ্জামান দুদু। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মাহমুদ হাসান খান বাবু। আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সকল অংশেরই নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গতকাল প্রকাশ করা হয়। ৪ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন যথাক্রমে ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা ও মজিবুল হক মালিক মজু। ১ম সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে শামসুজ্জামান দুদুকে। ২ নং সদস্য হাজি মোহা. মোজাম্মেল হক। এছাড়া যথাক্রমে সদস্যরা হলেন, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহি উদ্দীন, দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলাম, জীবননগর পৌর মেয়র হাজি নওয়াব আলী, সরদার আলী হোসেন, এম জেনারেল ইসলাম, লে.কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, অ্যাড. এমএম শাহ জাহান মুকুল, পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি, শহিদুল কাওনাইন টিলু, সানোয়োর হোসেন লাড্ডু, মজিবর রহমান, এসকে সাদী, অ্যাড. আব্দুল ওহাব মল্লিক, সাইফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মনির, রউফুন নাহার রীনা, রফিকুল হাসান তনু, ফরিদুল ইসলাম শিপলু, খাজা আবুল হাসনাত, আক্তারুজ্জামান, শরিফুজ্জামান শরিফ, ডিউক হুদা, লিয়াকত আলী শাহ, আজিজুল রহমান পিটু, শহিদুল ইসলাম রতন, অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, আবু জাফর মন্টু, জাহানারা বেগম, আবু বক্কর সিদ্দিক আবু, ইঞ্জিনিয়ার মোকলেছুর রহমান টিপু তরফদার, রবিউল ইসলাম বাবলু, আবু আলা শামসুজ্জামান, আব্দুল খালেক, এমদাদুল হক ডাবু, নাজমুস সালেহীন লিটন, শাজাহান কবির, ইছামুল হোসেন, আব্দুর জব্বার বাবলু, আনোয়ার হোসেন খান, আঞ্জু মনোয়ারা, সুশীল কুমার দাস, শাওন তরফদার, হাবিবুর রহমান হবি ও আব্দুল মোমিন মাস্টার।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির মূল কমিটি বিলুপ্ত করা হয় গত ২০ এপ্রিল। পরদিন ঢাকা নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ বৈঠকে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। আহত হন অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসসহ কমপক্ষে ৭ জন। বৈঠক ভেস্তে গেলে ওইদিনই দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ কার্যালয়ের বৈঠকও স্থগিত করা হয়। এরই মাঝে জানানো হয়, বৈঠক হবে না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রস্তাবনার ভিত্তিতিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে। এ কমিটি গতপরশু চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনুমোদন স্বাক্ষর করেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও অনুমোদন স্বাক্ষর দিয়েছেন। এ কমিটি কতোদিনের মধ্যে ইউনিয়ন, পৌর ও থানা কমিটি গঠনের পর জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করতে পারবে তা অবশ্য অনুমোদিত আহ্বায়ক কমিটিতে উল্লেখ করা হয়নি। আজ-কালের মধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশের পর স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল নানা মন্তব্য করেছে। চুয়াডাঙ্গা বিএনপি যখন বহুভাগে বিভক্ত তখন সকল অংশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়েই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুধুমাত্র সাবেক কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও তার সাথে থাকা আবু বক্কর সিদ্দিক, আইনুর হোসেন পচাসহ বেশ কয়েকজন বাদ পড়েছেন। চুয়াডাঙ্গা বিএনপির বৃহত দুটি অংশের অধিকাংশ নেতাই আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে প্রধান ও মাহমুদ হাসান খান বাবুকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি কি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সফল হবে? দূর করতে পারবে কি বিভেদ? এ প্রশ্ন উঠলেও জবাবের জন্য অপেক্ষার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এরকমই মন্তব্য করে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা বিএনপি বহুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ার কারণেই নাস্তানাবুদ অবস্থা। সমর্থকরাও ফুঁসেছেন ক্ষোভে। এরই মাঝে সকল পক্ষের অধিকাংশ নেতাকে নিয়ে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির পরবর্তী কার্যক্রম এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। হাজি মো. মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক করে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয় অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও শামসুজ্জামান দুদুসহ জেলার বেশ কিছু নেতাকে। আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগেই বিভক্ত হয়ে পড়ে। হাজি মো. মোজাম্মেল হক সভাপতি ও চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু সাধারণ সম্পাদক হয়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হলেও পাল্টা কমিটি গঠন করেন অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। তিনি সভাপতি হয়ে এবং খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনাকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত কমিটি বৈধ বলে দাবি করা হয়। যদিও মোজাম্মেল হক ও দুদুর কমিটিই অনুমোদন পেলেও পাল্টা কমিটি থেকেই যায়। নেতা-কর্মীদের অনেকেই গ্রুপিঙের বলি হতে থাকেন। পক্ষ বদলেরও প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কমিটি থেকে খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা সরে দাঁড়ালেও তিনি দীর্ঘদিন কোনো পক্ষেই ছিলেন না। এরই মাঝে জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তৃতীয় ধারা গড়ে তোলেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন হয়ে আরো একটি অংশের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন লে.কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও বিএনপির কাণ্ডারি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহমুদ হাসান খান বাবু। একই এলাকার মনোনান প্রত্যাশীদের সারিতে অবস্থান গড়তে থাকেন ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু। হাজি মোজাম্মেল হক ও তার ছেলে আতিকুল হক মিথুনের একই আসন কেন্দ্রিক কার্যক্রম মাঝে মাঝে জোরদার হয়ে ওঠে। এতোসব বিভক্তির মাঝে আসে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। এ আন্দোলন তেমন তড়া পায়নি। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে ভোটডাকাতি হলেও প্রতিরোধের মতো সহাস দেখাতে পারেনি কোনোপক্ষই। ফলে বিএনপির অহায়ত্ব চিত্রটি প্রকাশ পেতে থাকে। এরই মাঝে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে গঠিত হলো নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এক সময়ের বএনপি অধ্যশিত জনপদে অন্তঃদ্বন্দে অবস্থান হারানো বিএনপি কি নিজেদের অবস্থান ফেরাতে পারবে? নাকি তাদেরই নেতৃত্বাধীন শরিকদল কৌশলী জামায়াতে ইসলামী গ্রাস করবে পূর্বের মতোই?