নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ শুরু

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জেসাত খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মামলার প্রধান আসামি নূরহোসেন। সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় ছয় কোটি টাকা ব্যয় এবং এর সাথে র‌্যাবেরকয়েকজন জড়িত থাকার কথাও মেনে নিয়েছে। গতকালসোমবার পশ্চিমবঙ্গের অ্যান্টিটেরোরিস্ট স্কোয়াডের (এটিএস) ধারাবাহিক জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছে নূরহোসেন। এটিএসর কাছে নূর হোসেন এতো কিছু স্বীকার করার পরও তাকে গ্রেফতারেরবিষয়টি সরকারিভাবে বাংলাদেশকে জানায়নি ভারত।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্রদফতর আজ বিষয়টি বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারকে জানাবে। নারায়ণগঞ্জেরচাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন দু সঙ্গীসহ গত শনিবারকলকাতায় গ্রেফতার হয়।ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবারআনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, তারা নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাথেযোগাযোগ শুরু করেছে। নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ভারতের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। তবে তাকে কবে নাগাদ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবেতা এখনও নিশ্চিত নয়। এ নিয়ে কিছুটা প্রক্রিয়াগত বিলম্ব হতে পারে। বন্দিবিনিময় চুক্তি কিংবা ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তাকে ফিরিয়ে আনাহবে’। কোলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের একজন কূটনীতিকবলেছেন, নূর হোসেনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেকিছুই এখনও বাংলাদেশকে জানায়নি। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের সূত্রেই তারা খবরটিজেনেছেন এবং তারপর ভারতের কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ শুরুকরেছেন।নূর হোসেনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাকে সাথে নিয়েইরোববার রাতেএবং সোমবার বিকেলে দু’দফায় কোলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় অন্যবাংলাদেশি কুখ্যাত দুষ্কৃতকারীদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ এবংসিআইডি। কিন্তু অন্য কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও তাদের অবস্থানসম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন এটিএস কর্তারা। নূর হোসেনকে জেরা করেই এদিন একটিবিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে এটিএস। আত্মরক্ষার্থেই ওই অস্ত্রটি সে সংগ্রহকরেছিলো বলে এটিএসের কাছে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর।স্বভাবতইবেআইনি অনুপ্রবেশের পাশাপাশি এবার বেআইনি অস্ত্র মামলাও নূর হোসেনেরবিরুদ্ধে চালু হচ্ছে বলে এটিএসের এসইপি অনীশ সরকার জানান। এদিন সল্টলেকেরপুলিশ কমিশনার ও সাবেক এডিজি সিআইডি রাজীব কুমার নিজেই বিধাননগর নর্থ থানায়দীর্ঘক্ষণ নূর হোসেনকে জেরা করেছেন। লুঙ্গি ও হলদে গেঞ্জি পরা নূরকেসেখানেই আপাতত রাখা হয়েছে। রাজীব কুমারের নেতৃত্বেই মাস কয়েক আগে আরেককুখ্যাত সন্ত্রাসী সুব্রত বায়েনকে এ কৈখালি-বাগুইআটি এলাকা থেকে গ্রেফতারকরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছিল সিআইডি।

‌‌                নূর হোসেনকে ফেরত পাওয়া নিয়েনারায়ণগঞ্জ পুলিশের তরফে এদিনও বেসরকারিভাবে সল্টলেক পুলিশ কমিশনারেটেরসাথে যোগাযোগ করেছে। জেরায় যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে সেটিও বেসরকারিভাবেদু শহরের পুলিশ টেলিফোনে বিনিময় করছে বলে কমিশনারেটের একটি সূত্রজানিয়েছে। সল্টলেকের পুলিশও চাইছে, দ্রুত এ ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টথাকা দাগি নূর হোসেনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু এরই মধ্যে একটিপ্রোটোকলবিরোধী খবর হল, বাংলাদেশি নাগরিক নূর হোসেন রোববার রাতে গ্রেফতারহলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনকে বিষয়টি জানায়নিপশ্চিমবঙ্গ সরকার। দিল্লির হাইকমিশনকেও সরকারিভাবে জানানো হয়নি। এদিনসন্ধ্যায় ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম জানান, ‘সংবাদ মাধ্যমে আমরা বিষয়টিদেখেছি ও জেনেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রটোকল মেনে সরকারিভাবে কেউ আমাদেরনূর হোসেন গ্রেফতারের খবর জানায়নি।’ যদিও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা ওনিয়ম হলো, কোনো বিদেশি নাগরিক গ্রেফতার হলে সাথে সাথে সেই দেশের দূতাবাসকেজানিয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরজানিয়েছে, আজমঙ্গলবার বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনকে জানানো হবে।

নূরহোসেনকে জেরা করে মোট পাঁচটি মোবাইলফোন উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে একটি সংযোগগ্রামীণফোনের। অন্যগুলো ভারতীয় বিভিন্ন মোবাইল সংস্থার। যে মোবাইল থেকেসে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় যোগাযোগ রাখত সেগুলো থেকে অনেক ফোন নম্বর পাওয়াগেছে। ভারতীয় সব মোবাইলফোনের কললিস্ট জোগাড় করে এদিন সারা দিন ধরে তল্লাশিচলেছে। বিশেষ করে কোলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে কাদের সাথে নূর হোসেন যোগাযোগরাখত এবং তাদের পরিচয় নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশসল্টলেকের পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক নম্বর পাওয়াগেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাকারবার ও পাচারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদেরনম্বরও পাওয়া গেছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, ওইসব পাচারকারীদের মাধ্যমে নূরহোসেন চোরাপথে যেমন ভারতে পা রেখেছিলো, তেমনি ওদের হাত দিয়েই প্রতি মাসেলাখ-লাখ টাকা আসতো তার কাছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনি সব বলা সম্ভব নয় বলেএদিন বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকার করছেন সল্টলেক কমিশনারেটের গোয়েন্দাকর্তারা।নিরাপত্তার কারণে নূর হোসেনকে বাগুইআটি থেকে বিধাননগর নর্থথানায় সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তিন অভিযুক্তকেই লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরিয়েরাখা হয়েছে। সকালের দিকে ব্রেকফাস্ট না খেলেও দুপুরে ও রাতে ভাত-তরকারিখেয়েছে নূর হোসেন। অন্য বন্দিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখা হয়েছেতাদের। সোমবার রাতেও ফের নূর হোসেনকে নিয়ে তল্লাশি অভিযান হবে বলেওজানিয়েছেন এটিএস কর্তারা।

গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ, চিনার পার্কের ওইপানশালা ছাড়াও ভিআইপি রোডের ওপর তেঘরিযা, কৈখালি, যশোর রোডের ওপর দমদমপার্ক এলাকায় অন্তত দশটি পানশালায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াত।মদ্যপান ছাড়াও প্রতিটি পানশালার বড় আকর্ষণ হচ্ছে সুন্দরী গায়িকা। অভিযোগ, রাত বাড়তেই আইন ভেঙে পানশালাগুলোতে শুরু হয়ে যায় সুন্দরীদের নাচ। কয়েক দিনআগে নূর হোসেন গেছেন চিনার পার্কের ওই পানশালায়। সেখানে অন্য নেশাখোরেরকলার ধরে বলেছিলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে এর চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরীরা গানগায়।’ পানশালার এক কোণার টেবিলে বসে থাকা সাদা পোশাকের এক গোয়েন্দার কানে ‘বাংলাদেশ’ কথাটি যাওয়ার পরই চমকে ওঠেন তিনি। তখনই ‘বাংলাদেশি’ নেশাখোরেরছবি গোপনে তুলে তিনি নিয়ে আসেন বিধাননগর কমিশনারেটে। ইন্টারপোলের এবংকেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পাঠানো বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মূলঅভিযুক্ত নূর হোসেনের ছবি মেলাতেই চক্ষু চড়কগাছ গোয়েন্দাদের এরপরই গ্রেফতারহন নূর হোসেন।