নূর হোসেনের বাড়িতে অবশেষে অভিযান : রক্তমাখা মাইক্রোবাস উদ্ধার

আইনজীবীদের ডাকে আজ নারায়ণগঞ্জে হরতাল : ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার দুই : ১১ জন আটক

 

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবীচন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধানআসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের বাড়িতে অবশেষে গতকাল শনিবার অভিযানচালিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে একটি রক্তমাখা মাইক্রোবাস (টয়োটা ব্রান্ডেরহাইয়েস) ও চন্দন সরকারের ব্যবহৃত মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করাহয়েছে ১১ জনকে। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্য এক অভিযানেআরো দু জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নজরুলসহ ৭ জন অপহূত হওয়ার পরথেকেই নূর হোসেনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনাইসলাম বিউটি। নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালাতে এতো দেরি হলো কেন- এ সমন্ধে পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এতো দিন আমার কাছে খবরছিলো না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই। আজ (শনিবার) ওইবাড়িতে কয়েকজন গোপনে বৈঠক করছেএ রকম খবরের ভিত্তিতেই আমরা অভিযান চালাই।’

এদিকে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার প্রতিবাদেও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে আজ রোববার জেলা আইনজীবী সমিতি নারায়ণগঞ্জেপূর্ণ দিবস হরতাল ডেকেছে। বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, সাংস্কৃতিক জোট ও আমরানারায়ণগঞ্জবাসীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন এ হরতালে সমর্থন জানিয়েছেন। হরতাল সফলকরতে গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আইনজীবীদের সমাবেশঅনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা চাই দেশ থেকে সব ধরনের গুম, অপহরণ বন্ধ হোক। এ নৃশংস ঘটনায় যারাজড়িত তারা গ্রেফতার হোক।

যেভাবে অভিযান নূর হোসেনের বাড়িতে:প্রত্যক্ষদর্শীরাজানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে আকস্মিকভাবে নূর হোসেনের নারায়ণগঞ্জেরশিমরাইলস্থ টেকপাড়ার বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। পরে সকাল ১১টার দিকেআশপাশের জেলা থেকে আনা দু শতাধিক পুলিশের একাধিক টিম কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়েবাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত তল্লাশি চলে। এ সময় বাড়িথেকে মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য ৫ জনকে ছেড়ে দিয়ে ১১ জনকে নিয়েযায় পুলিশ। তবে নূর হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তল্লাশিকালে গণমাধ্যম কর্মীসহঅন্য কাউকে ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি।দুপুর সোয়া ২টার পরপুলিশ সুপার নিশ্চিত করেন যে, ওই বাড়ি থেকে রক্তমাখা একটি জামা, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের ব্যবহৃত মোবাইলফোন ও রক্তমাখা সবুজ রঙেরএকটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ ১৫-০৫৯৭) জব্দ করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটিরসামনের দিকের বামপার ভেতরের দিকে চেপে গেছে। দেখলে বোঝা যায় এটি কারোসাথে ধাক্কা খেয়েছে। এছাড়া মাইক্রোবাসের ভেতরে কয়েকটি পায়ের ছাপ পাওয়াগেছে। তিনি জানান, এগুলো পরীক্ষা করতে অভিযানের শেষ পর্যায়ে ঢাকা থেকেসিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দলনূর হোসেনের বাড়িতে পৌঁছে। তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ উদ্ধারকৃত শার্ট ওগাড়িটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, নূর হোসেনেরবাড়ি থেকে চন্দন সরকারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। যে ১১জনকে শেষ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ওই মোবাইলফোনটিব্যবহার করেছে। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এসপি কার্যালয়ে ব্রিফিং: অভিযানশেষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত একসাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ৭ জনকে খুনের অভিযোগে ২ জনকেগ্রেফতার করা হয়েছে। ব্রিফিঙে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিখন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ওই বাড়ি থেকে একটি শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে যারমধ্যে অনেক দাগ রয়েছে। সেটা আসলে রক্তের দাগ কি-না পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।এছাড়াও নূর হোসেনের পাসপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

আটকব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরাকিছু বলছি না। এজাহারভুক্ত আসামিকে কেন গ্রেফতার করতে পারলেন না জানতেচাইলে তিনি বলেন, আমরা খোঁজখবর করছি। তদন্ত চলছে।আসামি বিদেশে পালিয়েগেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তেমনটি মনে করি না। তিনি দেশেইআছেন।’সবকিছুর জন্য কিছু সময় প্রয়োজন বলে জানান এসপি।

প্রসঙ্গতগত রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওপ্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। গতবুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।পরদিন আরো একজনের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। লাশগুলো অপহৃত সাতজনেরবলে শনাক্ত করে তাদের পরিবার।নজরুল অপহরণের পরপরই তার স্ত্রীসেলিনা ইসলাম বিউটি ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি নূর হোসেন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণসম্পাদক মো. ইয়াসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠেনারায়ণগঞ্জ। মহাসড়কে বিক্ষোভ ছাড়াও বিক্ষুব্ধ জনতা নূর হোসেনেরকার্যালয়, যাত্রা প্যান্ডেল, আসামি ইয়াসিনের পেট্রোল পাম্প ও বাড়িতেঅগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জের ডিসি, এসপি, ৱ্যাবের সিও এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার ওসিসহ ৭ জনকে প্রত্যাহার করা।এরই মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীসাইফুল ইসলাম সানারপাড় এলাকায় অপহৃত হন। পরে শুক্রবার মধ্যরাতে পুলিশসাভারের নবীনগর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে।