নূর ইসলাম দম্পতি এখন ভিক্ষা নেয় না দেয়

জীবননগরে সমৃদ্ধি কর্মসূচির ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি

 

এম আর বাবু: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের দিন মজুর নূর ইসলাম ৪২ বছর বয়সে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। বাম দিকের হাত-পা অবস হয়ে পড়ে তার। স্ত্রী ও দুই মেয়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে হাতে তুলে নেন ভিক্ষার ঝুলি। স্ত্রী ছকিনা খাতুনও এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে চেয়ে-চিন্তে যা পেতেন তাই দিয়ে চলতো কোনো রকমে তাদের অভাবের সংসার। ১৮ বছর ভিক্ষা বৃত্তির পর নূর ইসলাম-ছকিনা দম্পতির দুঃখের সংসারে স্বপ্নের মত ২০১৪ সালের শেষের দিকে এসে স্বাবলম্বী হওয়ার কল্পকাহিনী শোনান ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা।

দম্পতি নূর ইসলাম-ছকিনা বলেন, সমৃদ্ধি কর্মসূচির কর্মকর্তারা তাদেও জানান পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফের অর্থায়নে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে। তাদের আর ভিক্ষা করতে হবে না। নিতে হবে না কাধে ভিক্ষার ঝুলি। এরপর ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়। এ টাকার মধ্যে ৪২ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে এক জোড়া গাই-বাছুর গরু, ১৮ হাজার ১৪৭ টাকা দিয়ে ৫টি পাটি ছাগল, ২ হাজার টাকায় ৭টি মুরগি ও ৩ হাজার টাকা দিয়ে ৮ জোড়া কবুতর কেনেন। ১৬ হাজার ৫৩৫ টাকা দিয়ে গরুর গোয়াল, ছাগলের ঘর এবং কবুতর ও মুরগির ঘর নির্মাণসহ নিজের বসতবাড়ির সংস্কার এবং বসতবাড়ির পেছনের পরিত্যাক্ত জমিতে শাক-সবজি চাষের জন্য বেড়া নির্মাণে খরচ করেন ১৭ হাজার ৮৬৮ টাকা।

এরপরে তাদের ভাগ্য বদলের কাহিনী শোনান এ দম্পতি। কঠোর পরিশ্রমের ফলে তাদের গোয়াল ঘরে এখন ২টি গরু মোটাতাজা হচ্ছে, ছাগল রয়েছে ১৭টি, মুরগি ২৫টি ও ১৭ জোড়া কবুতর। গরু ও ছাগল বিক্রি করে গত বছর ১ বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে করেছিলেন ধান চাষ। তাদের ঘরে এখন চাল মজুদ রয়েছে। ক্ষেতের শাক-সবজি, কবুতর ও মুরগি খেয়ে ও বিক্রি করে এখন তাদেও সংসার দিব্যি চলে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে গরু ও ছাগল বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করবেন তারা, এমন গল্প শোনালেন ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে পুনর্বাসিত হওয়া নূর ইসলাম-ছকিনা দম্পতি। তারা জানান, গত দু বছর ধরে তারা আর ভিক্ষা করেন না, এখন তারা অন্যকে ভিক্ষা দেন।

প্রায় একই রকম গল্প শোনালেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হওয়া ভিক্ষুক বেনীপুরের আছিয়া খাতুন, গোয়ালপাড়ার হাওয়া বিবি ও শহিদুল ইসলাম এবং গয়েশপুরের ময়জদ্দিনের ছেলে আজিজুল হক।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সীমান্ত ইউনিয়ন সমৃদ্ধি কর্মসূচির সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ জানালেন, সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ও বাঁকা ইউনিয়নে কাজ করা হচ্ছে। গত ২ বছরে এ দুইটি ইউনিয়নে ১২ জন ভিক্ষুককে পূনর্বাসনের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে অপর এক সূত্র জানিয়েছে, ভিক্ষুকদের স্বাবলম্বী করতে ইসলামি জাকাত ভিত্তিক অর্থনীতিসহ বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এক সময় আর ভিক্ষুক হয়তবা খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতি বছর কয়েকজন ভিক্ষুককে চিহ্নিত করে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে তারা কর্ম করে তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।