নূরের কব্জায় একডজন অস্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার:নূর হোসেন চেয়ারম্যানের কব্জায় রয়েছে একডজন অস্ত্র।এসব অস্ত্র নানা তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহার হয়েছে। প্রভাব-প্রতিপত্তি আর তারদুর্দান্ত প্রতাপ তাকে খ্যাতি এনে দেয় সন্ত্রাসের গডফাদার হিসাবে। সামান্যট্রাক হেলপার থেকে আজ কোটিপতি নূর। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসের সবপথেই পা মাড়িয়েছেন তিনি। তার এসব কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন নারায়ণগঞ্জেরডিসি-এসপি। তারা নূরকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটিটাকা। এক কথায় সাবেক জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল ও পুলিশ সুপার নুরুলইসলামের টাকার মেশিন ছিলো আলোচিত নুর হোসেন। যাত্রা, মাদক, জুয়া থেকে শুরুকরে সব ধরনের ব্যবসার মাসিক মাসোহারা পেতেন স্থানীয় প্রশাসনের এই দুকর্তাব্যক্তি। নুর হোসেনের বেশ কয়েকটি ব্যবসার গোপন পার্টনারও ছিলেন তারা। এসবের বিনিময়ে সরাসরি প্রশাসনিক সহায়তা পেতেন নুর হোসেন। প্রশাসনেরঅন্যান্য স্তরের কর্মকর্তাদের স্যার সম্বোধন করলেও ডিসি-এসপিকে ভাই বলেডাকতেন কয়েকবার দল বদল করা পলাতক এই নেতা। নুর হোসেন ও তার সহযোগীদের একডজন অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। ২ বছর ৪ মাস ক্ষমতায় থাকার সময়ে ৬টি অস্ত্রেরলাইসেন্স দিয়েছেন সাবেক জেলা প্রশাসক। নিয়ম অনুযায়ী শটগানের লাইসেন্সদেয়ার এখতিয়ার রয়েছে ডিসির। তবে পিস্তলের লাইসেন্স পেতে হলে ডিসির অনুমোদনলাগে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। নুর হোসেন সে অনুমোদনওপেয়েছেন এই ডিসির কাছ থেকে। এসবের বিনিময়ে উৎকোচ হিসেবে পেয়েছেন প্রায়কোটি টাকা।

স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এসব তথ্যজানান। তিনি বলেন, মাত্র দু বছরে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাবেকওই ডিসি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবেকর্মরত ছিলেন তিনি। তাই সহজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কার্যালয়েরনাম ভাঙাতেন। অপহরণ ঘটনার পর গত বুধবার জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়ালকেপ্রত্যাহার করা হয়। তাকে দেয়া হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদ। একইদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, ৱ্যাব ১১’র সিও এবং ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫ জনকেপ্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ডে সারাবছর যাত্রা, জুয়া পরিচালনা করতেন নুরহোসেন। এ থেকে প্রতিদিন দু লাখ টাকা দিতে হতো ডিসিকে। সকাল ১০টার মধ্যেডিসির বাসা অথবা অফিসে এ টাকা লোক মারফত পৌঁছে দিতেন নুর হোসেন। এ হিসেবেমাদকব্যবসার জন্য আলাদা একটি অঙ্ক নিয়মিত পেতেন মনোজ কান্তি বড়াল। তিনিবলেন, রাজস্ব প্রশাসন ছিলো ডিসির আয়ের আরেকটি আয়ের সোর্স। এখানকার কর্মকর্তাও কর্মচারীদের নিয়মিত বদলির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আড়াইবছরে প্রায় ২শকর্মচারীকে বদলি করেছেন তিনি। এ খাত থেকে তার আয় হয়েছেপ্রায় ২০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, নুর হোসেন ছিলেন রাজনৈতিক নেতা। আরজেলা প্রশাসক ছিলেন জেলার অভিভাবক। মূলত ডিসির প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ওআশকারায় নুর হোসেন ছিলেন বেপরোয়া। তার কাছ থেকে ডিসি মাসোহারা নিলেও এর কোনপ্রমাণ রাখেননি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, গোপনে বেশ কয়েকটিব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন মনোজ কান্তি বড়াল। নুর হোসেন এসব ব্যবসায়সরাসরি সহযোগিতা করতেন। ডিসি বড়াল উত্তরা ৩য় পর্যায়ের প্রকল্পেপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোটায় একটি তিন কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দপেয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তিনি প্লটটি ৫ কাঠায় রূপান্তর করেন। এদিকেশনিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন আলোচিত ওই ডিসি। রেওয়াজঅনুযায়ী বিদায়বেলায় স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে গিফট দেয়া হয়। সেপ্রস্তুতি নেয়াও হয়েছিলো। তবে সাবেক ওই ডিসি ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে কোনোধরনের গিফট না দেয়ার অনুরোধ জানান। গিফটের পরিবর্তে তিনি মোটা খামের টাকাদাবি করেন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, ডিসির এ অনুরোধের কারণেজেলার ৫ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০ হাজার করে এক লাখ টাকা দেন। অপরদিকেভূমি অফিস থেকে ৩০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা দেন।

প্রায় একই অভিযোগ রয়েছেজেলার সাবেক পুলিশ সুপার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসকের পাশাপাশিতিনিও নুর হোসেনের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। বিনিময়ে প্রশাসনিকসহায়তা দেয়া হতো তাকে। প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সপ্তারঅনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদাতুলেছেন। এ খাতে তিনি আয় করেছেন প্রায় কোটি টাকা।
নূরের ক্বজায় এক ডজন অস্ত্র: সামান্যট্রাক হেলপার থেকে চালক হয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীকালে ইউপিচেয়ারম্যান থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। জাতীয় পার্টি ওবিএনপি করে একযুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত। বর্তমানেসিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। কর্মময় আর রাজনৈতিক জীবনবাদ দিলে বর্তমানে তার পরিচয় ভয়ঙ্কর প্রভাশালী  এক কর্তাহিসেবে।পূর্বাঞ্চলের ৩৪টি জেলার যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টহলো শিমরাইল মোড়। এজন্য তার গুরুত্বও অনেক। রয়েছে বিশাল এক বাহিনী। যাদেরকাছে লাইসেন্স করা অস্ত্রই আছে ১১টি। যেদিকে যান অস্ত্রধারী ওই বাহিনী তাকেআগে পিছে গার্ড দেয়। গাড়ি-বাড়ি অর্থবিত্তে ফুলে ফেঁফে ওঠা নুর হোসেননিয়মিত মাসোহারা দিতেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের। বাদ যেতেননা রাজনৈতিক নেতারাও। সুবিধাভোগী ওই রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার ও আর্শীবাদনূর হোসেনকে বেপোয়ারা করে তুলেছে। ফলে গত দু বছর কাউকেই পরোয়া করেননিশিমরাইল মোড়ের কর্তাহোসেন চেয়ারম্যান। র‌্যাব সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ, ইন্ড্রাস্ট্র্রিয়াল পুলিশ পর্যন্ত তার বাহিনীর হাতে পিটুনি খেয়েছেন। বাদযায়নি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মী। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধেমামলা হয়েছে ২২টি। এরমধ্যে একটি হত্যা মামলাও আছে।