নিয়োগ বাণিজ্য : গাংনীর আরবিজিএম প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত

 

গাংনী প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আরবিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক এবি সিদ্দিককে লাঞ্ছিত করেছেন কমিটির এক সদস্য। গত শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তার কলার ধরে মারধর করেন ওই সদস্য ও তার অনুগতরা। নিয়োগ বাণিজ্য ছাড়াও সরকার ঘোষিত কর্মসূচি পালন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত কয়েক মাস শিক্ষকদের বিরোধের জের ধরে পাঠদানে ভাটা পড়েছে বলে জানায় ছাত্রছাত্রীরা। তবে পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের প্রাক্তন সদস্য কামাল হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান লিখনসহ তাদের পক্ষের কয়েকজনের সাথে প্রধান শিক্ষক ও তার আস্থাভজন সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলামের ঝগড়া বাধে। অবৈধভাবে দুইজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবির কলার ধরে কিলঘুষি মারেন কামাল ও তার সঙ্গীরা। পাঞ্জাবির বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়ে যায়। অপরদিকে কামালকেও প্রধান শিক্ষক ও শরিফুল কয়েকটি কিলঘুষি মারেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের একটি দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। শিক্ষকদের মধ্যে মারামারি ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ দেখে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। গণ্ডগোল থেমে গেলে ছুটি দেয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের।

এদিকে গত কয়েক মাস ধরে প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও বিদ্যালয় বিরোধী মনগড়া সিদ্ধান্তে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর। বিদ্যালয় ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টার পরিবর্তে প্রতিদিন ১টায় ছুটি হচ্ছে। সবগুলো বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে না। বার্ষিকক পরীক্ষার আগ মুহূর্তে পাঠদানে এ অবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে অসহায় ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও দায়ীদের বিরদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে হুঁশিয়রি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান। এ বিষয়ে যা যা করার দরকার তাই করা হবে বলেও জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে প্রাক্তন সদস্য কামাল হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান লিখন জানান, এর আগের কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক এবি সিদ্দিক ও তাদের আস্থাভাজন সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মিলে মোস্তফা ও জাহিদকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। দুজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধপন্থায় নিয়োগ সম্পন্ন হয়। আবারও নিয়োগ বাণিজ্য করার লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষকদের অনুগতদের নিয়ে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক ও শরিফুল তাদেরঁওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়মিত কমিটি গঠন ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে প্রাক্তন সদস্য কামাল হোসেন যশোর শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তনের নির্দেশে বোর্ড। কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত হওয়ার কথা। থলের বিড়াল বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে অভিযোগকারীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছেন।

গতকালের মারামারির সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের সদ্য সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী। অভিভাবক সদস্যদের ভোটে তিনি পাঁচবার নির্বাচিত সভাপতি। তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৩ জুলাই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্ধারিত সময়ে এডহক কমিটি গঠন করেননি প্রধান শিক্ষক। কেননা তিনি তার অনুগতদের নিয়ে ভোট ছাড়াই কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার ৫টি গ্রামের মানুষের মতামত ও ভোটে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমিটি হলেও এবার সে চিত্র ভিন্ন। কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি আইনলঙ্ঘন করে কালক্ষেপণ করেছেন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের শ্যালক চরগোয়ালগ্রামের প্রভাষক জাকির হোসেনকে অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে অভিভাবক সদস্য হিসেবে অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রস্তাব করেছেন প্রধান শিক্ষক। এতে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এবি সিদ্দিক ও সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাবিবুর রহমান লিখন ও কামাল হোসেনসহ তার অনুগতরা বিদ্যালয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক যেহেতু অবগত করেননি তাই অস্বচ্ছতার গন্ধ রয়েছে জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।