নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন!

 

ঝলসে যাওয়া গৃহবধূর আকুতি- আমাকে বাঁচান আমি সবই খুলে বলবো : স্বামীর নাটক

স্টাফ রিপোর্টার: নির্যাতক স্বামীর নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে ঝলসে গেছেন শাবানা খাতুন (৩০)। গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধ শাবানা খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।  শাবানা খাতুনের নির্যাতক স্বামী সিরাজুল ইসলাম সিরাজের দু হাত অল্প পুড়েছে। নেভাতে গিয়ে হাতে আগুনের আঁচে ঝলসে যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাজিবুল বলেন, শাবানার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ ঝলসে গেছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বার্ন ইউনিটে নেয়া দরকার। তাছাড়া শাবানা খাতুনের শরীরে আঘাতেরও চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসক রেফার করলেও তাকে ঢাকায় নেয়ার তেমন তাগিদ লক্ষ্য করা যায়নি।

জানা গেছে, পীরপুরকুল্লার মৃত মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ আনুমানিক ৫/৬ বছর আগে ঘরে স্ত্রী ও সন্তান রেখে ঢাকায় যায়। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গার্ডের চাকরি নেয়। সেখানে পরিচয় হয় ঢাকা মিরপুর মণিপুরিপাড়ার স্বামী পরিত্যক্তা শাবানা খাতুনের সাথে। বিয়ে করে। বিয়ের পর শাবানা খাতুনকে নিয়ে কিছুদিন ঢাকায় থাকে। পরে শাবানাকে নিয়ে পীরপুরকুল্লায় ফেরে সিরাজ। প্রথম স্ত্রী ফিরে যায় তার বাপের বাড়ি মদনায়। শাবানাকে নিয়ে সংসার করলেও কারণে অকারণে নির্যাতন করতে থাকে সিরাজ। গতকাল রোববার দুপুরেও মারধর করে শাবানাকে। সন্ধ্যায় করে নির্যাতন। ঘরে আটকে রাখে। মধ্যরাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার সুযোগে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাউ দাউ করে শরীরে আগুন জ্বলতে থাকে। স্বামী তখন আগুন নেভানোর নাটক করতে থাকে। এরকমই তথ্য পাওয়া গেলেও সিরাজ তার স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। শাবানার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নেয়ার জন্য হাসপাতালের চিকিৎসক গতরাতেই পুলিশে খবর দেন। অবশ্য গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সদর থানার এসআই জসিম রোগীর জবানবন্দি নেয়ার প্রক্রিয়া করছিলেন।

আগুনে ঝলসে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে শাবানা খাতুন বলেছেন, আমাকে আগে বাঁচান। বেঁচে উঠলে আমি সবই বলবো। আমার স্বামী আমাকে কীভাবে নির্যাতন করেছে তা আর গোপন রাখবো না। এ তথ্য দেয়ার মাঝে স্বামী সেখানে পৌছুতেই শাবানা আর তথ্য দিতে চাননি। চোখে মুখে ছিলো আতঙ্কের ছাপ। ফলে নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি শাবানা নিজেই আগুন ধরিয়েছেন নাকি তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য শাবানা খাতুন এক পর্যায়ে বলেছেন, স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়েই আগুন শরীরে আগুন ধরিয়ে মরতে চেয়েছি। মরিনি যখন, তখন আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচান আমি সবই বলবো।

অপরদিকে শাবানার নির্যাতক স্বামী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ একেক সময় একেক রকম তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রথমে বলেন ল্যাম্পের আগুন গায়ে ধরেছে। কিছুক্ষণ পরই বলেন, জিনে ধরিয়ে দিয়েছে।